ঢাকা বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪

Popular bangla online news portal

Janata Bank
Rupalibank

ডিপিডিসির কর্মকর্তা হুজ্জতের বিরুদ্ধে দুদকের মামলায় হতবাক স্বজনরা


নিউজ ডেস্ক
৫:২২ - বুধবার, জুলাই ১০, ২০২৪
ডিপিডিসির কর্মকর্তা হুজ্জতের বিরুদ্ধে দুদকের মামলায় হতবাক স্বজনরা

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. হুজ্জত উল্লাহ ও তার স্ত্রী মাহমুদা খাতুনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব মামলায় তাদের বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। গত সোমবার (৮ জুলাই) দুদকের উপপরিচালক সেলিনা আখতার বাদী হয়ে সংস্থাটির জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ মামলাটি দায়ের করেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হুজ্জত উল্লাহর গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ধোপাকান্দি ইউনিয়নের বেতবাড়ি এলাকায়। সেখানে হুজ্জত উল্লাহ ও তার স্ত্রী মাহমুদা খাতুনের তেমন সম্পদ বা দৃশ্যমান স্থাপনা নেই। তবে ঢাকার বনশ্রীতে দ্বিতীয় তলা বিশিষ্ট একটি ভবন, খিলক্ষেতের কনকর্ড টাওয়ারে একটি ফ্ল্যাট ও সাভারের আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় পৃথক দুইটি স্থানে প্রায় ২৫ শতাংশ জমি রয়েছে তাদের দুইজনের নামে।

বুধবার (১০ জুলাই) সরেজমিনে হুজ্জত উল্লাহর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে মামলার বিষয়টি এখনও হুজ্জত উল্লাহর বৃদ্ধা মায়ের কানে পৌঁছায়নি।

জানা গেছে, হুজ্জত উল্লাহর বাড়িতে টিনশেডের দুটি ঘর রয়েছে। এর মধ্যে একটি ঘরে হুজ্জত উল্লাহ ও অপরটিতে তার বড় ভাই হাবিবুল্লাহ বসবাস করেন। আরেকটি ঘরে তার বৃদ্ধা মা ও ছোট ভাই স্কুলশিক্ষক শহিদুল্লাহ থাকেন। হুজ্জত উল্লাহর এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে তাসিন জাপান প্রবাসী। 

স্থানীয়রা জানান, ডিপিডিসির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) হুজ্জত উল্লাহ ঈদ বা পারিবারিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া তার গ্রামের বাড়িতে আসেন না। চাকরির সুবাদে তিনি পরিবার নিয়ে ঢাকাতেই বসবাস করছেন। বড় পদে চাকরি করলেও এলাকার কাউকে তেমন সহযোগিতা করেনি। তিনি নিজ নামে এলাকায় ৬-৭ বিঘা ফসলি জমি ক্রয় করেছেন। ঢাকায় যাওয়ার পর থেকেই হুজ্জত উল্লাহ জমি কেনা-বেচার সাথে যুক্ত হন। এই কাজে তাকে সহযোগিতা করেন তার এক প্রতিবেশী ভাগিনা আবুল বাশার। এই সময়ে তিনি ঢাকার বনশ্রীতে দ্বিতীয় তলা বিশিষ্ট একটি ভবন, খিলক্ষেত এলাকায় কনকর্ড টাওয়ারে একটি ফ্ল্যাট ও আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় পৃথক দুইটি স্থানে প্রায় ২৫ শতাংশ জমি ক্রয় করেছেন। 

হুজ্জত উল্লাহর শ্বশুরবাড়ি একই জেলার ধনবাড়ী উপজেলার ভাইঘাটের পালপাড়ায়ও দৃশ্যমাণ কোনো সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তার শ্যালক জাপান প্রবাসী হওয়ার সুবাদে তার ছেলে তাসিনকে জাপানে পাঠানো হয়েছে। হুজ্জত উল্লাহ নিজের ও তার স্ত্রীর নামে ব্যাংক ব্যালেন্স বা ঢাকায় গোপনে আরও সম্পদ গড়েছেন কি না তা জানা নেই পরিবার ও স্থানীয়দের। হুজ্জত উল্লাহ ও তার স্ত্রী মাহমুদা খাতুনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে মামলা হওয়ায় স্থানীয়রাও হতবাক। 

বেতবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা আবুল বাশার বলেন, আমার মামা হুজ্জত উল্লাহ চাকরির সুবাদে ঢাকায় জমি বেচা-কেনার ব্যবসা করতেন। এজন্য তিনি আমাকে ঢাকায় নিয়েছিলেন। তার ব্যবসায় সহযোগিতা করতাম। বর্তমানে মামা ও তার স্ত্রীর নামে ঢাকার বনশ্রীতে দ্বিতীয় তলা বিশিষ্ট একটি ভবন, খিলক্ষেত এলাকায় কনকর্ড টাওয়ারে একটি ফ্ল্যাট ও আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় পৃথক দুইটি স্থানে প্রায় ২৫ শতাংশ জমি রয়েছে। আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার জায়গার একপাশে ঘর তুলে কোকারেজের ব্যবসা করছি। বাকি অংশে গার্মেন্টস সংশ্লিষ্ট একটা ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে। তিনি ঢাকায় জমি কেনা-বেচায় জড়িত হয়ে অনেক টাকা ঋণ হয়েছেন। এর আগেও দুদকে একটি মামলা হয়েছিল। সেটি নিষ্পত্তি করতে তার ১২ শতাংশের একটি জায়গা বিক্রি করতে হয়েছে। আবারও নতুন করে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলা কীভাবে হয় তা জানি না।

 হুজ্জত উল্লাহর ছোট ভাই রামনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শহিদুল্লাহ বলেন, ঢাকায় তার কী পরিমাণ সম্পদ রয়েছে বিষয়টি জানা নেই। এই বিষয়ে ভাইয়ের সাথে কখনও কথা হয়নি। প্রায় ২৪ বছর হলো ঢাকায় তার বাসায় যাওয়া হয় না। বাড়ি আসলেও পারিবারিকভাবে তেমন একসাথে বসা হয় না। ভাই ও ভাবির বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় পারিবারিকভাবে সম্মানহানি হচ্ছে।  

হুজ্জত উল্লাহর বড় ভাই হাবিবুল্লাহ বলেন, গ্রামের বাড়িতে সামান্য কিছু ফসলি জমি রয়েছে। এছাড়া ঢাকায় কোনো সম্পদ আছে কিনা জানি না। শুনেছি একটি বিল্ডিং রয়েছে। এই বিষয়ে কোনো কথা হয় না। মাঝেমধ্যে এলাকায় আসলে একসাথে খাওয়া হলেও সম্পত্তি অর্জন বা ব্যক্তিগত বিষয়ে আলোচনা হয় না। কী মামলা হয়েছে বা কেন মামলা হয়েছে এটা আমরা জানি না। তবে দুইদিন আগে সে মাকে ফোন করেছিল। শুধু বলেছে একটা সমস্যায় আছি দোয়া কইরো।

উপজেলার ধোপাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, মামলার বিষয়টি আমার জানা নেই। হুজ্জত উল্লাহকেও তেমনভাবে চিনি না।  

প্রসঙ্গত, ডিপিডিসির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) হুজ্জত উল্লাহর সম্পদ বিবরণী চেয়ে নোটিশ জারির পর ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। সম্পদ বিবরণী যাচাই-বাছাই শেষে দেখা যায়, তিনি নিজ নামে স্থাবর ও অস্থাবর খাতে মোট এক কোটি ৯৩ লাখ ৯২ হাজার ৭০৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। একই সঙ্গে এক কোটি ৯০ লাখ ৬৮ হাজার ৯১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। হুজ্জত উল্লাহ বর্তমানে ডিপিডিসির এইচআর শাখায় ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

অন্যদিকে হুজ্জত উল্লাহর স্ত্রী মাহমুদা খাতুনের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে বলা হয়, মাহমুদা খাতুনের সম্পদের হিসাব বিবরণী চাওয়ার পর তিনিও ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দুদকে সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল করেন। হিসাব বিবরণী যাচাই-বাছাই শেষে দেখা যায়, মাহমুদা খাতুনের স্বামী হুজ্জত উল্লাহর সহায়তায় নিজ নামে স্থাবর ও অস্থাবর খাতে মোট এক কোটি ১৬ লাখ ৮৫ হাজার ৬০৪ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। একই সঙ্গে ৮৯ লাখ ২২ হাজার ৫২৩ টাকার সম্পদের তথ্য দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে গোপন করেছেন।