ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা এসএম রিয়াজুল হক। ২০১৯ সাল থেকে এই পদে কর্মরত রয়েছেন তিনি। সরকারি কর্মকর্তা হয়েও গোপনে গাছ কেনা, কনস্ট্রাকশন ভবনে কাঠ সরবরাহ, বিক্রি ও মজুত করেছেন তিনি।
পৌরশহরের কয়েকটি স’মিলে সরেজমিনে দেখা যায়, ফাড়াবাড়ি অটোস্ট্যান্ড মোড়ে সাইফুলের মিলে কাঁঠাল গাছের গুড়ি, সেনুয়া ব্রিজের পাশে বাবুর মিলে কাঁঠাল ও মেহগনী গাছের গুড়ি, মৌসুমীর মিল, ফারুকের মিলসহ প্রায় সব কটি মিলে তার রয়েছে কোটি টাকার কাঠের গুড়ি। স’মিলগুলো থেকে কাঠের বিভিন্ন আকৃতি করে সেগুলো মজুত করে রাখেন দুটি গোডাউনে।
সরকারি কর্মকর্তার এমন কাঠ বাণিজ্যে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ী ও স’মিলের মালিকেরা। চড়া দামে কাঠ কিনে মজুত করায় বাজার ধরে রাখতে পারছেন না তারা। কর্মকর্তার এমন গোপন ব্যবসার আর কোটি টাকার আয় নিয়েও নানান প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
পৌরশহরের নিশ্চিন্তপুর ও তেলীপাড়ায় কাঠ মজুত করার জন্য দুটি গোডাউন রয়েছে রিয়াজুল হকের। বিভিন্ন স’মিল থেকে প্রস্তুত করা কাঠ মজুত করে রাখা হয় গোডাউনে। দিনের বেলা সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে ব্যবসার গোমড় ফাঁস থেকে বাঁচতে গভীর রাতে গোডাউন থেকে ট্রাকে করে কাঠ অন্যত্র পাঠান তিনি। তাতেও নিস্তার পাননি এ সরকারি কর্মকর্তা। রাতের বেলা কাঠ সরিয়ে নেওয়ার সময় সাংবাদিকদের সামনে পড়েন তিনি।
সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯–এর বিধিমালার ১৭ নম্বর ধারায় বলা আছে, কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের অনুমোদন ছাড়া, সরকারি কাজ ছাড়া অন্য কোনো ব্যবসায় জড়িত হতে পারবেন না। অন্য কোনো চাকরি বা কাজ গ্রহণ করতে পারবেন না। পরিবারের সদস্য অর্থাৎ স্ত্রী–সন্তানও ব্যবসা করতে পারবেন না।
স্থানীয় স’মিলের মালিক মোহাম্মদ বাবু বলেন, শহরের প্রত্যকটা মিলে তার কয়েক কোটি টাকার কাঠ কেনা রয়েছে। আমরা যদি ৫০ টাকা দাম বলে থাকি তিনি ৭০ টাকা দিয়ে সেসব কাঠ কিনে গোডাউনে রেখে দেন। তার জন্য আমরা ব্যবসা করতে পারি না। তিনি এত টাকা কোথা থেকে পান। আর চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা কীভাবে করেন।
কাঠ ব্যবসায়ী আরিফ হাসান বলেন, আমাদের কয়েক মাস থেকে ব্যবসাকে ধরে রাখা কঠিন হয়ে গেছে। তিনি সব কিছু বেশি দামে কিনে নেন। সেগুলো আবার গোডাউনে মজুত করে রাখেন। জেলাসহ বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করেন। তার টাকার কাছে আমাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চাকরির পাশাপাশি একই কর্মস্থলে ব্যবসার বিষয়ে জানতে চাইলে এসএম রিয়াজুল হক বলেন, আমি কয়েক দফায় ৪০ হতে ৪৫ লাখ টাকার কাঠ কিনেছি। রংপুরে দুটি ভবনের কনস্ট্রাকশনের জন্য কিনে দুটি গোডাউনে রেখেছি। তবে এটি আমার ব্যবসা না। আর সব স’মিলে আমার কাঠ কেনা রয়েছে। সবার হক আদায়ে আমি এটি করেছি।
গভীর রাতে গোডাউন থেকে কাঠ সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, দিনের বেলা আপনারা এসেছেন। ভাবলাম ঝামেলা হবে সেজন্য রংপুর পাঠিয়ে দিচ্ছি।
ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কৃষ্ণকমল চন্দ্র সরকার বলেন, বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবসা করার সুযোগ নেই। এটি প্রমাণিত হলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।