আগের ৬ শতাধিক অবৈধ পদোন্নতিকে বৈধতা দিতেই বিসিএস রিক্রুটমেন্ট রুলস-১৯৮১ এর অনেকগুলো ধারা সংশোধনের প্রস্তাব পাস করার পাঁয়তারা চলছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন।
বুধবার (১২ জুন) মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সভায় স্বাস্থ্য ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এমন দাবি করা হয়।
সভায় বক্তারা জানান, গত ৯ মে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় ২৩৪৬ জন এনক্যাডারকৃত নন-ক্যাডারদের (এডহক - ১৯৮৯ জন ও প্রজেক্ট-৩৫৭ জন) অনুকূলে বিসিএস রিক্রুটমেন্ট রুলস-১৯৮১ এর অনেকগুলো ধারা সংশোধনের প্রস্তাব পাস করা হয়। এই ধরনের অনুমোদন দেওয়া সংবিধান পরিপন্থি এবং আপিল বিভাগের দেওয়া রায়কে অবজ্ঞা করার শামিল। বিসিএস ফেল এবং সম্প্রতি এনক্যাডারকৃত একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তারা বলেন, আপিল বিভাগের রায়ে আছে, যেই শর্তে কোনো কর্মচারী নিয়োগ পান, সেই শর্তেই তিনি পদোন্নতি পাবেন। সময়ের প্রয়োজনে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ আইন-বিধি পরিবর্তন করতে স্বাধীন, তবে উক্ত আইন-বিধি পরিবর্তন করে পূর্বে নিয়োগপ্রাপ্ত তথা বিধিগত অধিকারী কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না। বিভিন্ন মারফতে আপিল বিভাগের এই রায় সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও তা আমলে নেওয়া হয়নি।
স্বাস্থ্য ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ডা. উম্মে তানিয়া নাসরিন বলেন, আমাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ আছে যাতে স্পষ্টতই বোঝা যায় যে, পূর্ববর্তী প্রায় ৬ শতাধিক অবৈধ পদোন্নতিকে বৈধতা দিতে এই সংশোধন করা হচ্ছে। এনক্যাডারমেন্টের আগেই চাকরির সব বিধি-বিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রায় ৬ শতাধিক নন-ক্যাডার কর্মকর্তাকে, ক্যাডারদের জন্য সংরক্ষিত পদে ৬ষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। এবার তাদের অবৈধ পদোন্নতিকে বৈধতা দিতেই এই সংশোধন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিধি সংশোধনের প্রস্তাবগুলো পাস করানোর লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মিথ্যা-ভুল তথ্য দিয়ে এবং হাইকোর্টে চলমান রিটের তথ্য গোপন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বার বার চিঠি দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে প্রভাবিত করেছিল। একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই ধরনের কার্যক্রম খুবই অগ্রহণযোগ্য এবং দৃষ্টিকটু।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক চিকিৎসক বলেন, বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের সম্ভাব্য সংখ্যা ৩৫ হাজার। মুষ্টিমেয় কয়েকজনের স্বার্থে বিদ্যমান আইন সংশোধন করে তা বাস্তবায়ন করা হলে সম্ভাব্য ১৫ হাজার স্বাস্থ্য ক্যাডার কর্মকর্তা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তারা পদায়ন ও পদোন্নতি বঞ্চিত হবেন, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, প্রশাসনিকভাবে এবং সামাজিকভাবে অসম্মানিত হবেন। প্রশাসনের এই ধরনের অপতৎপরতায় আমরা সংক্ষুব্ধ, বিব্রত এবং বিস্মিত। আমরা বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
অভিযোগ রয়েছে, মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও চিকিৎসক নেতার স্বজন অ্যাডহক থেকে ক্যাডারভুক্ত হয়েছেন। তাদের তদবিরেই শর্ত পরিবর্তন করে চাকরি স্থায়ীকরণ ও পদোন্নতির সুপারিশ করেছে মন্ত্রণালয়। এর আগে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া ৪৩০ চিকিৎসকের চাকরি নন-ক্যাডার থেকে ক্যাডারভুক্ত পদে স্থানান্তর করা হয়। এ নিয়ে উচ্চ আদালতে রিটও করেছেন স্বাস্থ্য ক্যাডারের কয়েকজন কর্মকর্তা। বিচারাধীন সেই রিটের তথ্য গোপন করে ওই কর্মকর্তাদের চাকরি স্থায়ী করে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য চিঠি চালাচালি করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সময়ে বিধিভঙ্গ করে অ্যাডহক ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ থেকে সদ্য ক্যাডারভুক্তদের চাকরি স্থায়ীকরণ ও পদোন্নতির উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে তার মেয়াদে উদ্যোগটি বাস্তবায়ন হয়নি। বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন দায়িত্ব নেওয়ার পর সবকিছু বুঝে ওঠার আগেই মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে তৎপর হয়ে ওঠেন। শর্ত পরিবর্তন করে সদ্য ক্যাডারভুক্তদের চাকরি স্থায়ীকরণ ও পদোন্নতির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একাধিক চিঠি দেওয়া হয়। এতে ওই চিকিৎসকদের সিনিয়র স্কেল পরীক্ষা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার এই সুপারিশ করা হয়। মন্ত্রণালয়ের এই সুপারিশকে অবৈধ ও বিধির লঙ্ঘন বলছেন বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডাররা।