বরগুনার বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়নের একটি খালের ওপর আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতু কোনো কাজে আসছে না। দুই প্রান্তে সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুটি ব্যবহার করতে পারছে না স্থানীয়রা। তাই হাজার হাজার মানুষের ভরসা বাঁশের সাঁকো।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) বরগুনা সূত্রে জানা যায়, বামনার রামনা ইউনিয়নের উত্তর রামনা এলাকার কাটাখালি খালের ওপর ২০১৮ সালের জুন মাসে ২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণের অনুমোদন দেয় এলজিইডি। এমএম বিল্ডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুটি নির্মাণের কাজ পায়। ২০১৯ সালের শেষের দিকে কাটাখালি খালে গার্ডার সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। পরে করোনা মহামারির কারণে সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে সেতুর কাজ শেষ হয়।
তবে সেতুর এক পাড়ে অপ্রশস্ত সড়ক ও পুকুর এবং অপর পাড়ে বসতঘর নির্মাণ হওয়ায় সংযোগ সড়কের জমি নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে স্থানীয়রা সেতুর পশ্চিম পাশে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে খাল পার হওয়ার ব্যবস্থা করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, রামনা শের-ই-বাংলা সমবায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পেছনে কাটাখালি খালের অবস্থান। খালটির ওপরে নির্মিত হয়েছে ৩০ মিটার দৈর্ঘ্য গার্ডার সেতুটি। কিন্তু দুই পাশে কোনো সংযোগ সড়ক না থাকায় এবং মাটি থেকে উচ্চতা ৩০-৩৫ ফুট হওয়ায় স্থানীয়রা সেতুটি দিয়ে চলাচল করতে পারছে না। সেতুর পাশেই একটি নড়বড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো রয়েছে। রামনা শের-ই-বাংলা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও উত্তর রামনা বাজারের ব্যবসায়ীসহ হাজার হাজার মানুষ বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার করছে। ফলে কোনো কাজেই আসছে না আড়াই কোটি টাকার সেতু।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সেতুটি নির্মাণ শেষ হলেও তারা ব্যবহার করতে পারছে না। বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়েই নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করছে। এই সাঁকো পার হতে গিয়ে শিশু, নারীসহ স্থানীয় অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। তাই শিগগিরই দুই পাশের সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে সেতুটি চালু করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
রাসেল আহমেদ তানু ও কামাল হাওলাদার নামে দুজন স্থানীয় বলেন, সেতু নির্মাণ শেষ হলেও আমরা চলাচল করতে পারছি না। দুই পাশে কোনো রাস্তা নেই। সেতুটি সমতল থেকে ৩০-৩৫ ফুট উঁচুতে। তাই আমরা বাধ্য হয়েই প্রতিদিন পাশের বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করছি। এর চেয়ে আগের পুরোনো সেতুই ভালো ছিল।
ফোরকান মাহমুদ নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, সেতুর দক্ষিণ পাশে স্কুল ও বাজার রয়েছে। প্রতিদিন শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ শত শত মানুষ বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার করছে। সেতু পার হতে গিয়ে অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।
নিজাম উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, সেতু ব্যবহার করতে না পারায় আমরা ভোগান্তিতে আছি। আমি বাজারে ব্যবসা করি। প্রতিদিন কয়েকবার এই সাঁকো পারাপার করতে হয়। অনেকবার বাজার নিয়ে যাওয়ার সময় পা পিছলে পড়ে গেছি। বর্ষা মৌসুমে সমস্যা আরও বেশি হয়। আমরা এলাকাবাসী এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি চাই।
এমএম বিল্ডার্সের প্রতিনিধি ও ঠিকাদার অপূর্ব রায় বলেন, ৮-৯ মাস হয়ে গেছে সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর এক পাশে পুকুর ও অপর পাশে বসতঘর। সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে না পারায় এখনও চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা যায়নি সেতুটি। রিভাইসের জন্য বার বার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একাধিকবার সেতুটি পরিদর্শন করেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জোমাদ্দার বলেন, সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে হলে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার জমি ছাড়তে হবে। এ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় কাজটি বন্ধ হয়েছে। আমি জমির মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পেলে তারা জমি ছাড়তে রাজি আছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী সুপ্রিয় মুখার্জি বলেন, সেতুর সংযোগ সড়ক পুনরায় নির্মাণের জন্য বিভাগীয় প্রকৌশলী ও প্রধান প্রকৌশলীর কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলেই কাজ শুরু হবে।