ঢাকা রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

Popular bangla online news portal

Janata Bank
Rupalibank

সরকারি মুজিব কলেজ : অনুকরণীয় বিদ্যাপীঠ


নিউজ ডেস্ক
১৩:৫৮ - সোমবার, ডিসেম্বর ৯, ২০২৪
সরকারি মুজিব কলেজ : অনুকরণীয় বিদ্যাপীঠ

সরকারি মুজিব কলেজ, নোয়াখালীর ঐতিহ্যবাহী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জে অবস্থিত একটি দীপশিখা। 

নবাগত কলেজ প্রশাসনের বহুমুখী উদ্যোগ ও কার্যকর পদক্ষেপে কলেজটি হয়ে উঠেছে দক্ষিণাঞ্চলের রোল মডেল। নান্দনিক পরিবেশ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, শিক্ষাদান পদ্ধতি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনায় এটি এখন অনুকরণীয় বিদ্যায়তন। মাত্র দেড় বছরে কলেজের শ্রী পাল্টে দিয়েছেন অত্র কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আজাদ আতিকুর রহমান। 

সরকারি মুজিব কলেজ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি নিয়ে গড়ে ওঠা এক সার্থক স্বপ্নের নাম। স্বাধীনতা-উত্তর দিনগুলোতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত প্রয়াসে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ভাটি অঞ্চলের দীপশিখা হিসেবে ১৯৭২সালে সরকারি মুজিব কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইতিহাস,ঐতিহ্য ও শিল্প-সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ উপজেলা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ। পশ্চিমে কবিরহাট উপজেলা, পূর্বে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা, উত্তরে ফেনীর দাগনভুইয়া উপজেলা, উত্তর পশ্চিম কোণে সেনবাগ উপজেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশি। ফেনী ও নোয়াখালীর পাঁচ উপজেলার মাঝখানে বসুরহাট বাজার। এ বাজার সংলগ্ন এক নৈসর্গিক স্থানে সরকারি মুজিব কলেজ অবস্থিত। প্রাকৃতিক শোভা, দৃষ্টিনন্দন চতুর্ভুজ আকৃতির পুকুর -এ যেন রবীন্দ্রনাথের শান্তি নিকেতন।

স্বাধীনতার পরপরই এ কলেজ প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিয়েছেন তৎকালীন সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবু নাছের চৌধুরী। এ ছাড়াও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সুশীল সমাজ,আলেমসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রম ঘামে গড়ে ওঠে এ বিদ্যাপীঠ।

১৯৮৬সালে মরহুম ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ কলেজটি জাতীয়করণ করেন। জননেতা মওদুদ আহমেদের হাত ধরে সরকারি কলেজ হিসেবে এর পথ চলা শুরু হয়। সে থেকে পাসের হার ও শিক্ষার মান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বদলে গেছে কোম্পানীগঞ্জের শিক্ষার মানচিত্র। 

  ২০১৭ সালে এ কলেজে অনার্স কোর্স চালু হয়। যা ছিল এ জনপদের বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত চাওয়া। এর মাধ্যমে এ কলেজে উচ্চশিক্ষার দ্বার উন্মোচিত হয়। এ এলাকার ছেলে মেয়েরা উচ্চশিক্ষার জন্য এখন আর দূর দূরান্তে যেতে হয় না। ফলে নারী শিক্ষার অগ্রগতিতে এটা একটা মাইলফলক। আর্থিক ও নানা কারণে যারা ঢাকা বা চট্টগ্রাম গিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না, তারা এখন নিজ এলাকায় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ লাভ করছে। এতে অসচ্ছল পরিবারের সন্তানেরা বিশেষভাবে উপকৃত হচ্ছে।

বর্তমানে কলেজের শিক্ষার পরিবেশ আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। নতুন অধ্যক্ষ প্রফেসর মো আজাদ আতিকুর রহমান যোগদানের পর কলেজের এ নান্দনিক পরিবর্তন হয়। 

প্রফেসর আজাদ আতিকুর রহমান বিভাগীয় প্রধান হিসেবে বাংলাদেশের স্বনামধন্য কলেজ সিলেট এমসি কলেজে ২৩বছর চাকুরি করেন। তারও আগে তিনি নোয়াখালী সরকারি কলেজে চাকরি করেন। বড়ো দুটি কলেজের অভিজ্ঞতা দিয়ে তিনি তাঁর স্বপ্নের রঙে রাঙিয়ে তুলেছেন সরকারি মুজিব কলেজ ক্যাম্পাসকে। তিনি যোগদানের পর কলেজের প্রতিটি ভবনকে রং করার ব্যবস্থা করেছেন। ভবনগুলোতে একাডেমিক কাজের সুবিধার্থে আলাদা নামকরণ করেছেন। স্যারের মতে শিক্ষার পূর্বশর্ত হলো নান্দনিক পরিবেশ। কলেজ আঙিনা হবে সুশোভিত। যেখানে এলে শিক্ষার্থীদের মনে পাঠের আগ্রহ জন্মাবে। এ চিন্তা থেকে তিনি ক্যাম্পাসে ফুলের বাগান তৈরি করেন। বাগানকে সুরক্ষিত করার জন্য তৈরি করেছেন দৃষ্টিনন্দন গার্ডেনিং বেষ্টনী। স্টাফদের পাশাপাশি স্যার নিজ হাতে বাগানের পরিচর্যা করেন। শীতের সময় বাহারি রঙের ফুল দেখতে সাবেক বর্তমান শিক্ষার্থীর পাশাপাশি এলাকাবাসীও ভিড় জমায়। ফুলে ফুলে প্রজাপতি,পাখিদের কিচিরমিচির,শিক্ষার্থীদের কলরব ক্যাম্পাসকে মাতিয়ে রাখে। অধ্যক্ষ আজাদ আতিকুর রহমান যোগদানের পর কলেজের জলাজঙ্গল পরিষ্কারের ব্যবস্থা করেন। কলেজ পুকুরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে মাছ চাষের উপযোগী করেন। পুকুরের চারিদেকে সবুজ বনানী,টগর ফুলের সারি,বক, পানকড়ি ও মাছরাঙার ছুটাছুটি,শিকারে ব্যর্থ হয়ে মন খারাপ করা কিংবা কাঙ্খিত শিকার নিয়ে নীড়ে ফেরার দৃশ্য কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মুগ্ধ করে। 

বর্তামন অধ্যক্ষের হাত ধরে কলেজের ছাত্র ও ছাত্রী কমন রুমের সৌন্দর্যবর্ধিত হয়েছে। তিনি ছাত্র ও ছাত্রীদের কমনরুমে টাইলসের ব্যবস্থা করেছেন । ছাত্রীদের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা করেছেন। এতে করে পরীক্ষা বা ক্লাসের সময় ছাত্রীরা নামাজ আদায় করতে পারে। ইহা শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। এতোদিন ছাত্রদের নামাজের ব্যবস্থা থাকলেও ছাত্রীদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা ছিল না। কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সমগ্র ক্যাম্পাসকে সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। ৩৮টি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে অধ্যক্ষ স্যার তাঁর কার্যালয়ে বসে ক্যাম্পাসকে মনিটর করেন। একাদশ শ্রেণির ক্লাসরুমকে শতভাগ ডিজিটাল করেছেন। পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে পাঠদানের ব্যবস্থা করেছেন। এতে পাঠদানের গুণগত পরিবর্তন হয়।

স্যারের আরেকটি যুগান্তকারী কাজ কলেজ মসজিদকে আধুনিকায়ন করা। তিনি কলেজ মসজিদে থাই গ্লাস লাগানোর ব্যবস্থা করেন। কলেজ মসজিদে চারটি এসি লাগানোর ব্যবস্থা করেন। ফলে এলাকাবাসী ও শিক্ষক শিক্ষার্থীরা গরমেও আরামে নামাজ আদায় করতে পারেন। ,লেখাপড়ার মান বৃদ্ধি করার জন্য মাসিক ক্লাস টেস্ট আরম্ভ করা, শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় ভালো ফলাফলধারীদের পুরস্কারের ব্যবস্থা করা, ডিবেটিং ক্লাব চালু করা, দ্বিমাসিক ডিবেট আয়োজন করা, দিবসভিত্তিক দেয়ালিকা উন্মোচন,রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন ইত্যাদি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করেছে। কলেজ ক্যাম্পাস ও লেখাপড়ার মানের আমূল পরিবর্তনে অভিভাবক মহলও অভিভূত।

আর্থিক ব্যবস্থাপনায়ও শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় এনেছেন। সরকারি পরিপত্রের বাহিরে আর্থিক লেনদেনের কোনো সুযোগ নেই। নো রিসিপ্ট নো মানি স্লোগানকে ধারণ করে কলেজের হিসাব শাখার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সার্টিফিকেট উত্তোলন, প্রশংসা পত্র, প্রত্যয়নপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উত্তোলনে শিক্ষার্থীদের কোনো ফি দিতে হয় না। যা শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। শ্রেণিকক্ষ,পরীক্ষার হল ও অফিসরুম সার্বক্ষণিক সিসিটিভির আওতায় রয়েছে। অধ্যক্ষ স্যার নিজেই তা মনিটরিং করেন।

পরিবর্তনের এ ধারা অব্যাহত থাকলে সরকারি মুজিব কলেজ অনন্য উচ্চতায় পৌঁছবে বলে সকলে প্রত্যাশা করেন।