অধ্যাপক মালেকা আক্তার চৌধুরী
'মধুরও বসন্ত এসেছে মধুরও মিলনও ঘটাতে অথবা যদি বলি আহা ! আজি এ বসন্তে --- ' হিমহিম শীত আর প্রকৃতিতে পত্রঝরার মর্মর বিরহী গীত শুনতে শুনতে বসন্ত চলে এলো ।
ফুল ফুটলো কি ফুটলো না সেদিকে দৃষ্টি দেবার সুযোগ খুব সামান্যই । পঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডারের পাতার বড় বড় অক্ষর ছাপিয়ে রক্তঝরা ফাল্গুন এসেছে বেদনা বিরহে আর পাশাপাশি বহমান নিস্তরঙ্গ জীবনে ঝিরিঝিরি বাতাসে সুমিষ্ট সৌরভ ছড়িয়ে , রঙিন ঘুড়ি উড়িয়ে , কোকিলের কুহুরবে মোহিত হয়ে তিতুমীরের সবুজ শ্যামলিমাময় মুখরিত প্রঙ্গনে - শুদ্ধস্বরের সুললিত পরিবেশনায় আবার এলো যে বসন্ত । পৌষালি পিঠা পায়েসের আবাহনে বিভাগীয় স্টলগুলি মুখরিত ছিলো মুখরোচক নানান পিঠা পুলির আয়োজনে।
মেতেছিলো তিতুমীরের হাজারো শিক্ষার্থী এবং সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ । গ্রাম্য সংস্কৃতির ঐতিহ্যমন্ডিত ছনের ঘরের সৌন্দর্য , দোলনার দুলুনি , কোকিলের কাগুজে উড়ন্ত ছবি , প্রশস্ত মাঠের দক্ষিণ প্রান্তে সারি সারি সফেদ স্টলের বৈচিত্র্যময় গ্রামীন তৈজসপত্রের বাহারী অনুষঙ্গ - সবমিলিয়ে অবারিত মাঠে দর্শকদের মুগ্ধ চোখের ঝিলিক যেনো ঠিকরে পড়ছে । রোদেলা সকালের স্নিগ্ধতায় প্রজাপতিমোহিত সাজে সজ্জিত শিক্ষার্থীদের উপস্হিতি জয় বাংলা মুক্তমঞ্চসহ সমগ্র ক্যাম্পাসে বিচরণ ছিলো মহোৎসবের আমেজে । যে যার মতো সামর্থ্যের সর্বাধিকটা দিয়েই নিজেকে সাজিয়েছে । উৎসব বলে কথা । সুর আর ঢাকের বাদ্যের অনুপম কথকতা । শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের উচ্ছ্বল - তারুণ্যদীপ্ত কুশীলবেরাসহ ছাত্রলীগ দলের 'বজ্রকন্ঠের' কুশীলবেরাও ছিলো নানাবিধ সাংস্কৃতিক আয়োজনে ব্যস্ত ।
বৃহৎ কলেবরে সুতীব্র আত্মবিশ্বাস নিয়ে বসন্তবরণ আর পিঠা উৎসবের এই আনন্দঘন আয়োজনের প্রাজ্ঞ গুণীজনেরা হলেন সম্মানিত অধ্যক্ষ মহোদয় প্রফেসর ফেরদৌস আরা বেগম , উপাধ্যক্ষ মহোদয় প্রফেসর মোঃ মহিউদ্দিন এবং কমিটির সম্মানিত আহ্বায়ক এবং দর্শন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর নাছিমা আক্তার চৌধুরী। অবশ্য শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের 'বসন্তবরণ' উৎসব প্রতিবছরই ক্যাম্পাসে সাড়ম্বরে আড়ম্বরে উদযাপিত হয়ে আসছে সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের উপস্হিতিতে। প্রফেসর নাছিমা আক্তার চৌধুরীর হাতেগড়া এ সংগঠনের যথেষ্ট সুনাম ও সুখ্যাতি রয়েছে সব শ্রেনির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে ।
ধূলি ধূসরিত সবুজ পত্র পল্লবে তখনও সজীবতার বর্ণালি বাহারী রঙের উপস্থিতি না থাকলেও প্রকৃতির কোলে কোকিলের কুহুতান , শিমুল , পলাশ , আর মুকুলিত আমের প্রাসরিত কান্ডের দোলায়িত হাসি যেনো জরাগ্রস্ত শীতকে পরাস্ত করার আনন্দে বিভোর । জয়বাংলা মুক্তমঞ্চে তখন পরিবেশিত হচ্ছিলো শুদ্ধস্বরসহ বিভিন্ন ক্লাবের শিক্ষার্থীদের মনোমুগ্ধকর নৃত্য গীত আবৃত্তি ও নাটক । মুক্ত বিহঙ্গের মতো সারা মাঠজুড়ে রঙিন প্রজাপতি শিক্ষার্থীদের বিচরণ। ফটোশুট , সেলফির উদ্দীপনায় যুক্ত পিঠা পুলির অনুষঙ্গ ।
বসন্তবরণে তিতুমীর পরিবারের সঙ্গে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সম্মানিত সভাপতি জনাব গোলাম কুদ্দুছ । তিতুমীর মেতেছিলো ঋতুরাজ বসন্তকে বরণের আয়োজনে । দীর্ঘ বর্ণাঢ্য রেলিতে অধ্যক্ষ মহোদয়ের নেতৃত্বে অংশগ্রহণ করেছেন কলেজের সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ ও শিক্ষার্থীবৃন্দ । বছরজুড়ে উৎসবের আমেজ জড়িয়ে থাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে । একাডেমিক বিষয়াদির পাশাপাশি এসব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধূলা এবং বহুমাত্রিক শিক্ষণীয় ক্লাবের সাথে সম্পৃক্ততা শিক্ষার্থীদের স্মার্ট , প্রজ্ঞাবান , আদর্শ মানবিক মানুষ ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। সেদিক থেকে সরকারি তিতুমীর কলেজ এগিয়ে রয়েছে বলেই আমরা বিশ্বাস করি। অধ্যক্ষ এবং উপাধ্যক্ষ মহোদয়ের পৃষ্ঠপোষকতা আক্ষরিক অর্থেই উল্লেখ করার মতো।
ফিরতে চাই রবিবাবু রচিত গানের শেষ কলিতে ; শুরু করেছিলাম যেভাবে -----
"নবীন বসন্ত আইলো নবীন জীবন ফোটাতে।" তারুণ্যের শক্তিতে সমৃদ্ধ হয়ে, বুদ্ধিদীপ্ত প্রজ্ঞাপূর্ণ মানব সম্পদ একদিন উদীয়মান বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে মর্যাদার স্হায়ী আসনে অধিষ্ঠিত করে পথ দেখাবে পিছিয়ে পড়া সমকালীন অসম অভিযাত্রীদের।
অধ্যাপক ও সাবেক শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।