পল ম্যাককার্টনি যেদিন হেই জ্যুড গানটি লিখেছিলেন, সেদিন কী ভেবেছিলেন ৫৫ বছর পর কোনো এক ফুটবলারের জন্য এই গানটি আলাদা করে স্মরণ করা হবে? বিটলসের কালজয়ী গত ৫ দশক ধরেই সংগীতপ্রেমীদের কাছে অনন্য। তবে সম্প্রতি রিয়াল মাদ্রিদ ভক্তদের জন্য এই গানটি যেন আলাদা এক আবহ পেলো। ইংলিশ তারকা জ্যুড বেলিংহ্যাম যেভাবে নিজেকে প্রতি ম্যাচেই মেলে ধরছেন, তাতে মাদ্রিদিস্তারা গাইতেই পারেন, ‘হেই জ্যুড, ডোন্ট মেইক ইট ব্যাড।'
জ্যুড বেলিংহ্যাম নিয়ে এমন স্তুতির পেছনে কারণও আছে। এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৬ ম্যাচে ৬ গোল করেছেন এই ইংলিশ টিনেজার। গতকাল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদ ঘরের মাঠে ড্র-ই করতো, যদি না জ্যুড বেলিংহ্যাম থাকতেন। নবাগত ইউনিয়ন বার্লিন অনেকটা স্তম্ভিতই করে দিত ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নদের। তবে শেষ পর্যন্ত বেলিংহ্যামে রক্ষা লস ব্লাঙ্কোসদের। শেষ মুহূর্তের গোলে ১-০ গোলে জয় পেয়েছে তারা।
অ্যাওয়ে মাঠ নিজেদের দখলে নিয়ে ফেলার ব্যাপারে সুখ্যাতি আছে বার্লিনের। বার্সেলোনার ন্যু ক্যাম্পেও এমন কিছুই করেছিল তারা। বার্লিনের এই ক্লাবটি জার্মান ২য় বিভাগ থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ পর্যন্ত আসতে সময় নিয়েছে মোটে ৫ বছর। এমন ক্লাবের জন্য সমর্থকরা সবটা উজার করে দেবেন, এটাই হয়ত স্বাভাবিক। কাল রিয়ালের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতেও সাড়া ফেলেছেন তারা। জার্মানি থেকে স্পেনে উড়ে গিয়েছিলেন হাজার দশেক বার্লিন সমর্থক। ৪ হাজার জন মাঠে প্রবেশ করলেও বাকিরা সমর্থন দিয়েছেন বাইরে থেকে।
তবে তাদের মন ভেঙেছেন ওই একজনই। রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ড্র করতে পারা রীতিমত ইতিহাস হয়ে থাকতো। কিন্তু যোগ করা সময়ে ম্যাচের ফল গড়ে দেন বেলিংহ্যাম। ফেদে ভালভের্দের শট বক্সে জটলার মধ্যে ডিফেন্ডারদের গায়ে লেগে ফিরে আসে ইংলিশ মিডফিল্ডারের কাছে। ততক্ষণে বল ঠেকাতে ডাইভ দিয়েছিলেন ইউনিয়ন বার্লিন গোলকিপার ফ্রেদেরিক রোনো। ফাঁকা পোস্ট আর মিস করলেন না বেলিংহ্যাম।
অবশ্য রিয়াল গোল পেতে পারতো আরও অনেক আগে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর পরেই ৫১ মিনিটে দারুণ এক আক্রমণ গড়ে দলটি। ডান প্রান্তে ভাসানো বলে ভলি করেছিলেন রদ্রিগো। ইউনিয়ন বার্লিনের গোলরক্ষক তা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। বল পেয়েছে লুকাস ভাস্কেজ আবার পাস দেন ব্রাজিলিয়ান তারকাকে। কী করে যেন সেবারও বল জালে জড়াতে পারেননি রদ্রিগো। আর ৬৩ মিনিটে হোসেলুর শট পোস্টে লাগলে আবারও হতাশায় ডুবতে হয় মাদ্রিদিস্তাদের।
২০০৯ সালের পর প্রথমবারের মতো করিম বেনজেমা নেই রিয়ালের একাদশে। নেই ভিনিসিয়ুস জুনিয়রও। প্রথমার্ধটায় রিয়ালও উপহার দিয়েছিল ভুলে যাবার মত ফুটবল। শুরুটা ছিল মন্থর। আর বার্লিন খেলছিল বাস পার্ক নীতিতে। ডিবক্সের ভেতরেই ছিল ৭ থেকে ৮ জন। স্বাভাবিকভাবেই বেলিংহাম-রদ্রিগোরা শুরু করেছেন ধীরগতিতে। এর মাঝেই অবশ্য ৩ মিনিটে গোল পেতে পারত। তবে হোসেলু মিস করেছেন সুবর্ণ এক সুযোগ। সুযোগ যে বার্লিন পায়নি তা নয়। এক মিনিট পরেই ইউনিয়নের কেভিন বেহরেনস।
পুরো ম্যাচেই অবশ্য পরিস্থিতি ছিল এমন। ৭৫ শতাংশ সময় বল দখলে রাখলেও মাত্র ৭টি শট পোস্টে রাখতে পেরেছে রিয়াল। ইউনিয়ন বার্লিন একটি শটও অন টার্গেট রাখেনি। বার্লিন অবশ্য এসেছিল সেই দূর্গের দেয়াল হয়ে। তবে ঐতিহাসিক বার্লিনের দেয়াল যেমন টেকেনি। রিয়াল মাদ্রিদের সামনে টেকেনি ইউনিয়ন বার্লিনের রক্ষণটাও। জ্যুড বেলিংহ্যামে ভর করে জয়টা পেয়েছে সেই মাদ্রিদই।