ইস্কান্দার মির্জা শামীম
আজ বাঙালির গৌরবদীপ্ত দিন– মহান স্বাধীনতা দিবস। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের বুকে বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।
২৫ মার্চ মধ্যরাতের আগে আগে পাকিস্তানিরা শুরু করে গণহত্যা। সেদিন মধ্যরাতের পর পরই বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, ‘আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।’ বঙ্গবন্ধু ঘোষণা পেয়ে নিহত হাজার মানুষের রক্ত ছুঁয়ে বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলা মাকে মুক্ত করতে। নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের সিঁড়ি বেয়ে ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ চূড়ান্ত বিজয় লাভ করে বাংলাদেশ। লাখ লাখ শহীদের রক্তে রাঙানো আমাদের স্বাধীনতার সূর্য। তাই এ দেশের জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা দিবস সবচাইতে গৌরবময় ও পবিত্রতম দিন। হাজার বছরের বঞ্চনা আর নীপিড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মাহেন্দ্রক্ষণ ছিল মার্চের এই দিন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করে। হানাদাররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, ইকবাল হল, রোকেয়া হল, শিক্ষকদের বাসা, পিলখানার ইপিআর সদর দপ্তর, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে একযোগে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে হত্যা করে অগণিত নিরস্ত্র দেশপ্রেমিক ও দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। পাকহানাদার বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একাধিক গণকবর খুঁড়ে সেখানে শত শত লাশ মাটি চাপা দিয়ে তার ওপর বুলডোজার চালায়। আক্রমণ চালানো হয় পিলখানায় ইপিআর সদর দপ্তর ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনে।
বঙ্গবন্ধু তার দূরদর্শী সিদ্ধান্তে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হ্যান্ডবিল আকারে ইংরেজি ও বাংলায় ছাপিয়ে চট্টগ্রামে বিলি করা হয়। আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা চট্টগ্রামের ইপিআর সদর দপ্তর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়্যারলেস মারফত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান ২৬ মার্চ বেলা ২টা ১০ মিনিটে এবং ২টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম বেতার থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। এদিকে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়৷
বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ওই রাতেই তৎকালীন পূর্ব বাংলার পুলিশ, ইপিআর ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শুরু করে প্রতিরোধ যুদ্ধ, সঙ্গে যোগ দেয় সাধারণ মানুষ। ৯ মাসের যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর দেশ শত্রুমুক্ত হয়।
স্বাধীনতার ৫২ বছরে দাঁড়িয়ে দেশ পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয়েছে ঠিকই কিন্তু এখনো শত্রু মুক্ত হতে পারেনি। এখন পাকিস্তানির কিছু উত্তরসরী আছে যারা এদেশের বিরুদ্ধে এখনো ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। যারা এদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস মুছে দিতে চায়। এদের প্রতিহত করতে হবে আমাদের। দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস, অস্তিতকে টিকিয়ে রাখতে হবে আমাদের। সেই সঙ্গে দেশ বিরোধী শক্তিতে প্রতিহত করতে হবে ঐক্যবন্ধ হয়ে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সেই অসমাপ্ত স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য প্রতিদিন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশ আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত হওয়ার পথে। আসুন জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করে টেক ব্যাক নয়, স্মার্ট বাংলাদেশের সারথি হই।
লেখক: সদস্য- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ কমিটি