সারাদিনের কর্মব্যস্ততায় শান্তির একটানা ঘুমের পর সকালে হঠাৎই ঘুম থেকে উঠে কাঁধে ব্যথা অনুভব করছেন। নাড়াতে পারছেন না হাত ও কাঁধের বিভিন্ন সংযোগস্থল। চিকিৎসা শাস্ত্রে এ রোগটির নাম অ্যাডেসিভ ক্যাপসুলাইটিস।
এই রোগে কাঁধের বল ও সকেট সন্ধি আক্রান্ত হয়। সম্প্রতি এর সমাধান দিয়েছেন নিউ দিল্লির সীতারাম ভর্তিয়া ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হোলি ফ্যামিলি হাসপাতালের কনসালটেন্ট অর্থোপেডিক এবং ডা. বিরেণ নাথকার্নী।
তিনি বলেন, যাদের বয়স ৪০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, তাদের এই রোগের ঝুঁকি বেশি। তাছাড়া ডায়াবেটিস, থাইরয়েড ও হৃদ্যন্ত্রের সমস্যায় ভোগা রোগীদের ক্ষেত্রেও এই রোগের ঝুঁকি বেশি। তবে পুরুষদের তুলনায় নারীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
যে কারণে এই সমস্যা হয়
বাহু ও কাঁধ সংযুক্ত অস্থি সন্ধিতে অবস্থিত হাড়, লিগামেন্ট ও টেনডনগুলো কিছুটা ক্যাপসুলের মতো এক প্রকার টিস্যু দ্বারা আবৃত থাকে। এই ক্যাপসুল ফুললে বা শক্ত হয়ে গেলে ফ্রোজেন শোল্ডার দেখা দিতে পারে। তবে ঠিক কেন এই ঘটনা ঘটে তা নিয়ে অবশ্য নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞরা।
ব্যথা কতদিন থাকতে পারে
এই ব্যথার স্থায়িত্ব ছয় থেকে নয় মাস। কাঁধ নড়াচড়া করা যায় না, আবার এই সমস্যার সময়কাল চার থেকে বারো মাস পর্যন্তও হতে পার। এই সময়ের মধ্যে আপনার ব্যথা আরও অসহনীয় হয়ে উঠতে পারে। এক এক রোগীর অবশ্য এই সমস্যার স্থায়িত্ব এক এক রকমের হয়।
ডায়াবিটিস রোগীদের ক্ষেত্রে আশঙ্কা কতটা
সাধারণত ১০-২০ শতাংশ ডায়াবিটিস রোগীদের ফ্রোজেন শোল্ডার হয়। তাই ডায়াবেটিস থাকলে সতর্ক থাকতে হবে। হাইপোথাইরয়েডিসম, হাইপারথাইরয়েডিসম, কার্ডিও ভাসকুলার অসুখ, পার্কিনসন, স্ট্রোক হলে ফ্রোজেন শোল্ডার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁধের সংযোগস্থলে হিউমেরাস, স্ক্যাপুলা ও কলার বোন থাকে। আর এই এই তিনটে হাড়কে একত্রে বল ও সফেট জয়েন্ট বলে। এই শোল্ডার জয়েন্টকে ঘিরে কিছু কোষ কলা দিয়ে ক্যাপসুল গঠন করে। সেই ক্যাপসুল যখন খুব শক্ত হয়ে যায় তখন আমাদের কাঁধ নড়াচড়া করতে কষ্ট হয়। যন্ত্রণা ক্রমশ বাড়তে থাকে।
এই রোগের রক্ষণ
১। দীর্ঘদিন ধরে কাঁধের জয়েন্টে ব্যথা হলে এই সমস্যা দেখা যায়।
২। প্রথম স্টেজে কাঁধে ব্যথা শুরু হয় ও হাত নাড়তে অসুবিধা দেখা হয়।
৩। কাঁধের যে পাশে সমস্যা হয় সেদিকে কাত হয়ে শুয়ে থাকলে ওই হাত নাড়াতে কষ্ট হয়। রাতের দিকে যন্ত্রণা আরও তীব্র হয়।
৪। দ্বিতীয় ধাপে ব্যথা কমে এলেও হাত আটকে আসে। কোনও মতেই নড়াচড়া করা যায় না।
৫। তৃতীয় ধাপে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসে কাঁধ, ধীরে ধীরে নড়ানো যায় হাত।
যেভাবে মিলবে সমাধান
১। সুগার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করুন।
২। কাঁধের এক্সারসাইজ ও স্ট্রেচ করার চেষ্টা করুন।
৩। চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন।
৪। এই ধরনের সমস্যা থাকলে বিশেষজ্ঞরা কিছু নির্দিষ্ট ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।