ঢাকা সোমবার, নভেম্বর ৪, ২০২৪

Popular bangla online news portal

Janata Bank
Rupalibank

পি কে হালদারের সহযোগীর ২৩ কোটি টাকার শেয়ার ফ্রিজ


নিউজ ডেস্ক
৪:০১ - বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ১৬, ২০২৩
পি কে হালদারের সহযোগীর ২৩ কোটি টাকার শেয়ার ফ্রিজ

আর্থিক কেলেঙ্কারির আলোচিত হোতা প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) সহযোগী এবং এফএএস ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেষ্টমেন্টের সাবেক চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমানের ২৩ কোটি টাকার শেয়ার ফ্রিজ করা হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের প্রেক্ষিতে মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত থেকে ওই অস্থাবর সম্পত্তি ফ্রিজ করা হয়েছে। বুধবার (১৫ নভেম্বর) দুদকের ঊর্ধ্বতন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ফ্রিজকৃত সম্পদের মধ্যে রয়েছে— সিদ্দিকুর রহমানের নামে সিমটেক্স ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেডের ১০ টাকা মূল্যের মোট ১৬ কোটি ৭২ লাখ ৮৭ হাজার ৩৯০ টাকার ১ কোটি ৬৭ লাখ ২৮ হাজার ৭৩৯টি শেয়ার, তার আত্মীয়  মাহফুজা রহমানের নামে ২ কোটি ৩৮ লাখ ৭১ হাজার ৫৫০ টাকা, নিয়ার রহমান সাকিবের নামে ১ কোটি ৩৫ লাখ ৩ হাজার ৬০০ টাকা, ইসতিয়াক রহমান ইমরানের নামে ১ কোটি ৪৯ লাখ ৬১ হাজার ৪৩০ টাকা এবং অপর আত্মীয় মো. ইনসাফ আলী শেখের নামে ১ কোটি ৪১ লাখ ৯৩ হাজার ৩০০ টাকার শেয়ার। সব মিলিয়ে ২৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকার শেয়ার ফ্রিজ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, পি কে হালদার চক্র কিংবা এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দুদক দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছে। অনুসন্ধান কিংবা তদন্ত যে পর্যায়েই হোক দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা যদি মনে করে কারও সম্পদ ফ্রিজ বা ক্রোক করা দরকার, তাহলে আদালতের অনুমতি নিয়ে তা করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি পি কে হালদার চক্রের একজনের কোম্পানির শেয়ারের তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্ত কর্মকর্তা আদালতের কাছে ফ্রিজ করার আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।

দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, দুদকের মামলার আসামি মো. সিদ্দিকুর রহমান বিদেশে পলাতক থাকায় অবৈধ পন্থায় অর্জিত অস্থাবর সম্পদ তার আত্মীয় স্বজনকে দিয়ে তার নিয়ন্ত্রণাধীন বিএসইসির লিস্টেড প্রতিষ্ঠান সিমটেক্স ইন্ড্রাস্ট্রিজ লি. এর শেয়ার বিক্রি করে বিদেশে অর্থ পাচারসহ অর্থ অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর, বন্ধক বা বেহাত করার প্রচেষ্ট করছেন মর্মে তদন্তকারী কর্মকর্তা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছেন। বর্ণিত অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত হয়ে গেলে আইনের উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে। যেহেতু আসামির নামে অনুসন্ধান শেষে মামলা রুজু করা হয়েছে সেহেতু নিম্নবর্ণিত অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধকরণ করার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা আবেদন করেন।

২০২২ সালের ১৯ মে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি ও পলাতক আসামি প্রশান্ত কুমার হালদারসহ (পি কে হালদার) ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল দুদক। মামলায় কাগুজে প্রতিষ্ঠান দিয়া শিপিং লিমিটেডের নামে এফএএস(ফাস) ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ৪৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। এ সংস্থাটির সহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াত বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

আসামিরা হলেন— এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি ও পলাতক আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার, এন্ড বি ট্রেডিংয়ের মালিক সুব্রত দাস ও শ্রভ্রা রাণী ঘোষ, এফএএস ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেষ্টমেন্টের চেয়ারম্যান এম.এ হাফিজ, সাবেক চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম, পরিচালক অরুণ কুমার কুণ্ডু, অঞ্জন কুমার রায়, মো. মোস্তাইন বিল্লাহ, উজ্জ্বল কুমার নন্দী, সত্য গোপাল পোদ্দার এবং এফএএস ফাইন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহরিয়ার।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার পূর্বক প্রতারণার মাধ্যমে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করে ভুয়া ও কাগুজে প্রতিষ্ঠান এন্ড বি ট্রেডিং এর নামে জাল রেকর্ডপত্রাদি প্রস্তুত করে তা সঠিক হিসাবে ব্যবহার করে উক্ত অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের মালিককে ঋণ পেতে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেন ও সংশ্লিষ্ট ঋণের বেনিফিসিয়ারী কর্তৃক এফএএস ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট থেকে ৪৪ কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে উক্ত অর্থ বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যক্তির হিসাবে স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে গোপনে পাচার করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৪০৯, ৪২০, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯ ও ১৯৪৭ সনের দুদক আইনের ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪ (২) ও (৩) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

আলোচিত পি কে হালদার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত মোট ৪৩টি মামলা দায়ের করেছে দুদক। এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের অর্থ আত্মসাতে ২২টি মামলা ও এফএএস লিজিংয়ের অর্থ আত্মসাতে ১৩ মামলা হয়েছে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সম্পদের মামলা রয়েছে। যার মধ্যে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারকে ২২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

২০২২ সালের ১৪ মে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোক নগরের একটি বাড়ি থেকে পি কে হালদার ও তার পাঁচ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়।