ইস্কান্দার মির্জা শামীম
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার ৭৪ বছর পূর্ণ করে ৭৫ বছরে পা দিলো। বাঙালির অধিকার ও বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে আওয়ামী লীগের নাম।
বাঙালির হাজার বছরের কাংখিত স্বাধীনতা অর্জন থেকে শুরু করে এদেশের সকল মহৎ অর্জনের সাথে জড়িয়ে আাছে ঐতিহ্যবাহী এই রাজনৈতিক সংগঠনটি।
আওয়ামী লীগ এমন একটি রাজনৈতিক দল, দেশ স্বাধীন হওয়ার অর্ধশত বছর অতিক্রম হওয়ার পরও দেশ ও দেশের জনগণের কাছে দলটির আবেদন একটুও কমেনি; বরং জনগণের অধিকার আদায়, তাদের ভাগ্যন্নয়নে আওয়ামী লীগের প্রয়োজনীয়তা দিনকে দিন আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। টানা তিন মেয়াদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরসুরি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সাহসী দেশ পরিচালনা, তার মানবিক ও উন্নয়নমুখি মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলার মানুষ শতভাগ নিশ্চিত হয়েছে। একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশের মানুষ কিছু পায়। তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে। তাই আওয়ামী লীগের ইতিহাসের অতীতের যেকোনো সময়ের চাইতে বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রয়োজনীয়তা ও সাধারণ জনগণের কাছে দলটির কদর বেড়েছে বহু গুণে। তাই আওয়ামী লীগ আজ পরিণত হয়েছে জনগণের আাবেগ, ভালোবাসা আর হৃদয়ের সংগঠনে।
দেশের যত বড় বড় অর্জন রয়েছে তা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাত ধরেই অর্জিত হয়েছে। জোর দিয়েই বলা যায়, সাফল্যের বিবেচনায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ধারে কাছে আর কোনো রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব নেই।
মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্ম ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন। এই দিন পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এই রাজনৈতিক দলটি আত্মপ্রকাশ করে।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ধর্মনিরপেক্ষ-অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, শোষণমুক্ত সাম্যের সমাজ নির্মাণের আদর্শ এবং একটি উন্নত সমৃদ্ধ আধুনিক, প্রগতিশীল সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দর্শনের ভিত্তি রচনা করে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের উদ্যোগেই মাতৃভাষা বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষার আনুষ্ঠানিক মর্যাদা লাভ করে।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রতিটি পদে পদে রয়েছে আওয়ামী লীগের অবদান। আইয়ুব খানের এক দশকের স্বৈরশাসন-বিরোধী আন্দোলন, ’৬২ ও ’৬৪-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৪-এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধ, ’৬৬-এর ঐতিহাসিক ৬-দফা আন্দোলন, ’৬৮-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ৬-দফাভিত্তিক ’৭০-এর নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয়, ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” খ্যাত কালজয়ী ভাষণ ও পরবর্তীতে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন, ২৫ শে মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যার পর ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অবশেষে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাসের এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।
আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় ঐক্যের রূপকার।
এ সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আওয়ামী লীগকে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। কখনো নেতৃত্বের শূন্যতা, কখনো দমন-পীড়ন নির্যাতনের শিকার, কখনো ভাঙনের মুখে পড়তে হয়েছে এ দলটিকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা এবং ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর নেতৃত্ব শূন্যতায় পড়ে আওয়ামী লীগ। ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগকে মুছে ফেলার সব ধরনের ষড়যন্ত্র করে খুনী চক্র। আওয়ামী লীগের লাখো নেতাকর্মীদের ওপর নেমে আসে অত্যাচারের স্টীম রোলার।
সকল ষড়যন্ত্র, অত্যাচার ও নিপীড়ন সহ্য করে ঘুরে দাঁড়াবার আপ্রাণ চেষ্টা করে আওয়ামী লীগ। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ৬ বছরের নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তের মধ্য দিয়ে নতুন জাগরণের সৃষ্টি হয় দলটির তৃনমূল নেতাকর্মীদের মাঝে। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাঙালি জাতির হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। সংগ্রামের পথে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সেই থেকে এখন পর্যন্ত শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নই নয়, সাধারণ মানুষের জীবনের মান উন্নয়ন, তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ, অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষকে সামাজিক বেষ্টনীর আওতায় আনতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত সকল কর্মসূচি আজ দেশি ও আন্তর্জাতিক বিশ্বে স্বীকৃত। আর শেখ হাসিনার এমন দুরদর্শী নেতৃত্বের যোগ্য সহযোগী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। যার যোগ্যতা এবং নীতি আদর্শের গুণে আজ বাংলাদেশের প্রতিটি আনাছে কানাছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল। তাই তো প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয় বারের মতও দলের সাধারণ সম্পাদক করেছেন প্রিয় নেতা ওবায়দুল কাদেরকে।
শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে ও সুদক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনায় সুশাসন, স্থিতিশীল অর্থনীতি, মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, উন্নয়নে গতিশীলতা, শিক্ষার প্রসার, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংস্থান, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, খাদ্য নিরাপত্তা, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুগান্তকারী উন্নয়নের ফলে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে। তাই আসুন দেশের উন্নয়নের এমন ধারা অব্যহত রাখতে, দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থে আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শেখ হাসিনার সরকারকে আবারও ক্ষমতায় আনতে সকলে ঐক্যবদ্ধ হই।
লেখক: সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ কমিটি।