নওগাঁ সদর থানার কীর্তিপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে নির্বাচিত হওয়া ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হক হান্নানকে কার্যালয়ে বসতে না দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই কাজ করা হয়েছে বলে জানা যায়। স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুম্মন বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা কেউ ঘটালে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।
জানা যায়, গতকাল বিকেলে বিএনপির স্থানীয় নেতা আফজাল হোসেন ও আব্দুস ছামাদ মাস্টারের নেতৃত্বে একদল লোক কীর্তিপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ সময় ইউনিয়ন পরিষদে দায়িত্বপ্রাপ্ত গ্রাম পুলিশ এবং অন্যরা বাধা দিতে গেলে তাদেরকে হুমকি-ধুমকি দেয়, মারধর করতে উদ্যত হয়। আফজাল হোসেন কীর্তিপুরের পার্শ্ববর্তী বক্তারপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং আব্দুস ছামাদ মাস্টার কীর্তিপুর ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক।
জানা গেছে, বক্তারপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আফজালের ইন্ধনে স্থানীয় যুবদল নেতা নূর নবীর নেতৃত্বে কদিন আগে ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হক হান্নানের বাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়া হয়। ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হক হান্নান জানান, তখন থেকেই তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, 'আমি তাদের নির্যাতনে বাড়িতে থাকতে পারছি না। আমার বাড়িঘর ভাংচুর করেছে এবং লুটপাট করা হয়েছে। ভাংচুর এবং লুটপাটে প্রায় ১২ থেকে ১৫ লক্ষ টাকার মতো ক্ষতি করা হয়েছে। তখন থেকেই আমাকে এবং আমার পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুঁমকি দেওয়া হচ্ছে। আমি আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা চাই। আর জনপ্রতিনিধি হিসেবে ইউপি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব যেন নিরবিচ্ছিন্নভাবে পালন করতে পারি তার নিরাপত্তা চাই।'
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম রবিন শিষ বলেন, 'আমাদের কাছে অভিযোগ এলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিবো। চেয়ারম্যানদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা সেনাবাহিনী, পুলিশসহ অন্যদের সঙ্গে নিয়ে আমরা ব্যবস্থা নিবো।'
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুম্মন বলেন, 'আপনারা নিশ্চয়ই জানেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট করে বলেছেন, কেউ বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কোনো ধরনের অন্যায়-অপরাধ করলে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হবে।' ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে তালা ঝুঁলিয়ে দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, 'এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে এবং সেটা যদি সঠিক হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। এবং আমরা বহিষ্কার করছিও।'
এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জাহিদুর ইসলাম ধলু বলেন, 'এ ধরনের ঘটনায় কেউ জড়িত থাকলে তাকে তাৎক্ষণিক দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। কেন্দ্র থেকে আমাদের কাছে তেমন নির্দেশনাই দেওয়া হয়েছে। আগে তো দেখা যেত অভিযোগ পেলে আমরা আত্মপক্ষ সমর্থনে তিনদিন বা পাঁচদিন এভাবে সময় দিতাম। কিন্তু এখন কেন্দ্র থেকে নির্দেশ আছে, অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণাত বহিষ্কার করা হবে।'
বিষয়টি জানতে বারবার কল দিয়েও বক্তারপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেনের মোবাইল নাম্বারটি সচল পাওয়া যায়নি। অভিযোগ বিষয়ে কীর্তিপুর ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস ছামাদ মাস্টার বলেন, 'আমি তালা দেইনি। তালা লাগিয়ে আমার কাছে চাবিটা রেখেছিল শুধু।' কারা তালা লাগিয়েছে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, 'কারা এই কাজটা করেছে আমি আসলে জানি না।'