ঢাকা শুক্রবার, ডিসেম্বর ৬, ২০২৪

Popular bangla online news portal

Janata Bank
Rupalibank

দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন তারা


নিউজ ডেস্ক
১৮:২২ - সোমবার, জুলাই ২৯, ২০২৪
দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন তারা

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ পেরিয়ে ডানদিকে একটু গেলেই ১০১ নম্বর ওয়ার্ড। সেখানে রয়েছে ২৮টি বেড, যার সবগুলোতেই ভর্তি রয়েছেন সাম্প্রতিক সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ রোগীরা। অপারেশনের পর এদের কারো কারো শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

তবে এখনই হাসপাতাল থেকে ছাড় পাচ্ছেন না তারা, থাকতে হবে আরও বেশ কিছুদিন। হাসপাতালের বেডে শুয়েই সময় কাটছে তাদের, পাশে আছেন স্বজনরাও। আহতদের অনেকের এখনো কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। তবুও ধীরে ধীরে কথা বলছেন স্বজনদের সঙ্গে। এর মধ্যেই কেউ কেউ গুলিবিদ্ধ হওয়ার দুঃসহ স্মৃতি মনে করে আঁতকে উঠছেন।

রোববার (২৮ জুলাই) ঢাকা মেডিকেলের ১০১ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। সহিংসতায় আহত ও গুলিবিদ্ধরা এই ওয়ার্ড ছাড়াও ঢাকা মেডিকেলের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে ১৮, ১৯ ও ২০ জুলাই ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এসময় অনেকে গুলিবিদ্ধ হন। তারা ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেলের ১০১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন খোরশেদ আলম। তিনি মুক্ত খবর নামের একটি গণমাধ্যমের সাংবাদিক। গত ২০ জুলাই রামপুরা এলাকায় সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হন তিনি।

খোরশেদ আলম বলেন, আছরের নামাজ পড়তে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছি। কোন দিক থেকে গুলি এসে লাগল, এরপর আমি পড়ে যাই। এটা দুঃসহ স্মৃতি।

তার স্ত্রী নুরুন নাহার আক্তার বলেন, আমরা রাজধানীর পশ্চিম রামপুরায় থাকি। আমার স্বামীই আমাদের পরিবারের আয়ের উৎস। সে গুলিবিদ্ধ হওয়ায় আমাদের বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। আমার স্বামী নামাজ পড়ে বের হয়ে বাইরে গন্ডগোল দেখতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। কোমরে গুলি লেগেছে। তার পায়খানার রাস্তা ফেলে দেওয়া হয়েছে অপারেশনের মাধ্যমে। আমার শ্বশুর বাড়ি নোয়াখালীর চৌমুহনীতে। আমাদের দুই মেয়ে। তাদের বাবা গুলিবিদ্ধ হওয়ায় আমাদের আয়-রোজগার নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছি।

শনির আখড়া এলাকায় ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেলে আসেন মোহাম্মদ পিন্টু। ২০ নম্বর বেডে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। পিন্টু বলেন, শনির আখড়ায় আমার তামা-পিতলের দোকান। দোকান থেকে বের হয়েছি, এরপর গুলি এসে আমার গায়ে লাগে। আমার পাশে আরও দুই-তিনজন গুলিকে খেয়েছে। দুপুরের দিকের গণ্ডগোলে আমার গুলি লাগে।

তিনি বলেন, প্রথমে আমি কোমরে গুলি খেয়ে মাটিতে পড়ে যাই। মনে হলো ইলেকট্রিক শক খেলাম, ছটফট করছিলাম। প্রথমে অন্য একটা হাসপাতালে নিয়ে গেছে স্থানীয়রা, পরে অজ্ঞান হয়ে যাই। এরপর আমাকে আনা হয় ঢাকা মেডিকেলে। সেই পরিস্থিতির কথা মনে হলে ভয় পেয়ে যাই, আঁতকে উঠি।

পিন্টু জানান, তার গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরে। শনির আখড়ায় তামা-পিতলের পণ্যের ব্যবসা করেন। পরিবারের তিনিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এই ব্যবসায়ী বলেন, আমি বিয়ে করিনি। মা, ছোট ভাই-বোন একসঙ্গে থাকি। সবার দায়িত্ব আমার কাঁধে।

ঢামেকের ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের ৮ নম্বর বেডে চিকিৎসা নিচ্ছেন কামরুল হাসান। তিনি বলেন, ১৯ জুলাই আমি বায়তুল মোকাররম মসজিদে জুমার নামাজ পড়ে বের হয়ে রাস্তায় গুলি খেয়েছি। এরপর আমি লুটিয়ে পড়ি। মানুষ আমাকে এনে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। আমি হামদর্দে চাকরি করি। আমার বাড়ি নোয়াখালী। অপারেশন হওয়ার পর এখনো খুব অসুস্থ অবস্থার মধ্যে আছি। গুলি লাগার সেই মুহূর্ত মনে হলে এখনো শিউরে উঠি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রোগী ভর্তির রেকর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ভর্তি হওয়া ৩৬৭ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কয়েকজন চিকিৎসা শেষে চলে গেছেন। এছাড়াও ১৫ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ১৫৭৯ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।