শাহরিয়ার হোসেন শাহপরান
৩১ জানুয়ারি দুপুর ৩ টায় বেড়িয়ে পড়লাম বন্ধু -বান্ধবদের জড়াজড়িতে উত্তরার দিয়াবাড়ীর দিকে।উদ্দেশ্য বহুদিন পর বড় পীচে ক্রিকেট খেলবো।যথারীতি বন্ধু বাহারের সাথে রিক্সায় করে ঢুকে পড়লাম সেক্টরের প্রশস্ত সড়কে।
এরপর রিক্সা কিছুদূর যাবার পর ছোট্ট ছোট্ট খাল চোখ পড়লো।কচুরিপানায় ভরপুর খালগুলোর একপাশ পুরো সাদায় ছেঁয়ে গেছে।
মনে হচ্ছে কোনো চিত্রশিল্পী যেন তার সুনিপুণ হাতে সাদার মহোৎসবে দিলখোলা হয়ে এঁকে রেখেছে শুভ্রনয়নী কোনো মানবীর অবয়ব।
অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলাম কচুরিপানার ওপর সাদা আবরণটির দিকে,প্রথম দেখায় বিশ্বাস হচ্ছিল না।এই তিলোত্তমা ঢাকাতেই ছোট একটা খালে প্রচন্ড মনোযোগ সহকারে গোগাসে গিলছে পোকামাকড়, ছোট-বড় মাছসহ অন্যান্য জলজজীব। সাদা এই নানন্দিক পাখিটি "সাদা বক "নামে বহুল পরিচিত। হাজার হাজার বক এক খাল থেকে আরেক খালে উড়োউড়ি করছে কিংবা চুপিসারে শিকারে কাজে ব্যস্ত সময় পারছে কেউ কেউ।এতো পরিমাণ সাদাবক জীবনের প্রথমে দেখে সত্যিই আমি আবেগাপ্লুত। প্রায় তিনঘন্টার মতো সময় তাদের কিছু ভালো ভিডিও ক্যাপচার করার জন্য দাঁড়িয়েই ছিলাম। অবশেষে ঝাঁকবদ্ধ শ্বেতশুভ্র মায়াবি পাখিটির দারুণ এক ভিডিও শুট নিতে পেরেছিলাম।
অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছিলো তাদের সারিবদ্ধ ছুটোছুটির মূহুর্তটি।ঢাকার মতো ইট -কাঁঠ পাথুরে শহরে প্রকৃতি এতো চঞ্চল এতো উদার,তা কখনোই ভাবতেই পারিনি। এতো দূষণ আর শোষণের পরেও যে এতো মায়াবী দৃশ্য এ শহরেও ঘটে, সেটা সত্যি চমৎকার এক প্রাপ্তি।দিয়াবাড়ীর খাল যেন ধবল বকের এক মহাঅভয়ারণ্য।
জীবনানন্দ দাশের কবিতায় খোঁজ মিলে এই ধবল বকের।সাঁঝের বেলায় নীড়ে ফেরা কিংবা দল বেঁধে সুবজ ধান ক্ষেতে বসার দৃশ্য আকৃষ্ট করে ভ্রমণপিপাসুদের।প্রকৃতিতে শুভ্রতা ছড়ানো সাদা বক দল বেঁধে নিঃশব্দে চলে।
প্রকৃতির দারুণ এই পাখিটিকে রক্ষার জন্য শহরের প্রতিটি নাগরিককেই সচেতন থাকতে হবে।সেইসাথে এসব খালবিল দখল ও দূষণ মুক্ত রাখতে হবে।তবেই ঢাকার খালগুলো পাখপাখালির অভয়ারণ্যে পরিণিত হবে।হাজার কোটি বছর বেঁচে থাকুক খালবিলের ধবল বক।
লেখক
শিক্ষার্থী সরকারি তিতুমীর কলেজ