বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির নেতা-কর্মীদের জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবকে লক্ষ্মীপুর-৪ সংসদীয় আসনে জনসংযোগ ও সাংগঠনিক কাজে সহযোগিতা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে সরব হয়ে উঠেছে জেএসডি নেতাকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) কমলনগর ও রামগতি উপজেলায় বিপুলসংখ্যক জেএসডির নেতা-কর্মী নিয়ে পালন করা হয়েছে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এদিকে ২২ অক্টোবর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভির স্বাক্ষরিত জনসংযোগ সহযোগিতার চিঠিকে কেন্দ্র করে লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) আসনে দুই দলই এখন সরব রয়েছে। বিএনপি ও জেএসডির কয়েকজন শীর্ষ নেতাসহ বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বললে বিষয়টি নিয়ে তাদের মনোভাব প্রকাশ পায়।
জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ২০০১ ও ২০০৮ সালে টানা দুইবার বিএনপি নেতা এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার হাত ধরেই ২০০৬ সালে বৃহত্তর রামগতি উপজেলাকে ভাগ করে কমলনগরকে নতুন উপজেলা করা হয়। নিজান কেন্দ্রীয় সহশিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং রামগতি উপজেলার চর আলগী ইউনিয়নের রামদয়াল এলাকার বাসিন্দা। ২০১৪ সালের বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে ধানের শীষ প্রতীকে আ স ম রব ভোট করেন। তখন আওয়ামী লীগ সরকারের রাতের ভোটে বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অবঃ) আবদুল মান্নান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে ২০০৮ সালে বিএনপি নেতা নিজানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আ স ম রবের ভরাডুবি হয়। রব রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের বাসিন্দা।
জেলা বিএনপিকে দেওয়া অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভির স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার সংসদীয় এলাকায় জনসংযোগ ও তার দলের কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য আপনাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সংসদীয় এলাকার থানা, উপজেলা বা পৌরসভা বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে বিষয়টি অবহিত করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করতে আপনাদের অনুরোধ করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমলনগর ও রামগতি উপজেলার কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, রব সাহেব রামগতি-কমলনগরের গর্ব। তিনি এখান থেকে এমপি হয়েছেন, মন্ত্রীও ছিলেন। রামগতিতে জমিদারহাট বাজারের অদূরে তিনি একটি স্টেডিয়াম ও একটি বাসটার্মিনাল নির্মাণের জন্য নামফলক উন্মোচন করেছেন। কিন্তু তা ফলকেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের নেতারা ওই জমি দখলে নিয়ে অর্থনৈতিকভাবে চাঙ্গা হয়েছেন। এখন রব সাহেবের বয়স হয়েছে। তিনি এলাকাতেও তেমন আসেন না। তার দলীয় নেতাকর্মী কিংবা সমর্থন খুবই কম এলাকায়।
তারা আরও জানায়, আসনটি বিএনপি অধ্যুষিত। এতে নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীই জয়ী হবেন। সেক্ষেত্রে রব সাহেব ধানের শীষ পেলে নির্বাচিত হবেন। তা না হলে হবেন না। এছাড়া বিএনপি নেতা নিজান কর্মঠ মানুষ। এলাকায় তার যোগাযোগ বেশি। মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে পারেন। দল থেকে মনোনয়ন পেলে তিনি অনায়াসে নির্বাচিত হয়ে যাবেন।
রামগতি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জামাল উদ্দিন বলেন, এলাকায় জাসদের স্বল্প সংখ্যক নেতাকর্মী রয়েছে। তাদেরকে যেন কেউ হয়রানি না করে সেজন্য দল থেকে তাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য বলেছে। কিন্তু তারা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে আলেকজান্ডার উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে।
কমলনগর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব নুরুল হুদা চৌধুরী বলেন, আ স ম রব এলাকায় এসে যেন হামলা বা হয়রানির শিকার না হন, এজন্য দল থেকে তাকে সহযোগিতার জন্য বলা হয়েছে।
জেএসডির কমলনগর উপজেলা কমিটির সভাপতি আবদুল মোতালেব বলেন, বিএনপি কেন চিঠি দিয়েছেন, তা তারা জানেন। এ নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ শীর্ষ নেতারাই বলতে পারবেন আ স ম আবদুর রবসহ ৬ জন জাতীয় নেতার জন্য কেন চিঠি দিয়েছেন। স্থানীয় বিএনপি নেতারা ঘটনাটি বিতর্কিত করার জন্য বিভিন্ন কথা বলছে। তাদের ৩১ দফার সঙ্গে আমাদের ১০ দফার মিল রয়েছে। গত ১৭ বছর আ স ম আবদুর রব আন্দোলন করেছেন। তিনি স্বাধীন দেশের প্রথম পতাকা উত্তোলক। তিনি জাতীয় বীর। তার সঙ্গে কে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তা নিয়ে তিনি চিন্তা করেন না। নির্বাচিত হওয়ার জন্য তিনি রাজনীতি করেন না। তিনি রাজনীতির জন্য রাজনীতি করেন।
লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান বলেন, জাসদের নেতাকর্মী কম। তারা আমাদের সঙ্গে সরকার বিরোধী আন্দোলনে কাজ করেছেন। এতে আ স ম আবদুর রব যেন এলাকায় গেলে কারো দ্বারা ক্ষতি বা হয়রানির শিকার না হয়, এজন্য দল থেকে তাকে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে। আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করব। আমাদের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভিও সেভাবেই বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হাছিবুর রহমান বলেন, রব সাহেব দীর্ঘদিন বিএনপির সঙ্গে স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। তিনি এলাকায় এলে কিংবা তার দলে নেতাকর্মীরা যেন অসম্মানিত না হন এজন্য কেন্দ্র থেকে তাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য বলা হয়েছে। এখানে নির্বাচন নিয়ে কোনো বিষয় নেই।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বিকেলে জেএসডির কমলনগর উপজেলা কমিটির ব্যানারে ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করা হয়েছে। উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের সামনে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার উচ্চ বিদ্যালয় মাঠেও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।