ঢাকা মঙ্গলবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৪

Popular bangla online news portal

Janata Bank
Rupalibank

এবারও সীমান্তে দুই বাংলার মিলনমেলা হচ্ছে না


নিউজ ডেস্ক
৫:০৮ - রবিবার, এপ্রিল ১৪, ২০২৪
এবারও সীমান্তে দুই বাংলার মিলনমেলা হচ্ছে না

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের আগে ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার অধীনে ছিল উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের চারটি উপজেলা (পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া, বোদা ও দেবীগঞ্জ)। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও দুই দেশের নাগরিকরা তাদের স্বজনদের বাড়িতে যাওয়া-আসার সুযোগ পেতেন। মিলিত হতে পারতেন। কিন্তু ভারত সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের পর থেকে বন্ধ হয়ে যায় অবাধ যাতায়াত। 

পরবর্তীতে উভয় দেশের নাগরিকদের অনুরোধে বিজিবি ও বিএসএফের সহযোগিতায় সীমান্তে দুই বাংলার মিলনমেলা হলে উভয় দেশের স্বজনরা সাক্ষাৎ করতে পারতেন। কিন্তু গত পাঁচ বছর ধরে সীমান্ত মিলনমেলা বন্ধ থাকায় দুই বাংলার মানুষগুলো তাদের স্বজনদের কাছে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন না।

শনিবার (১৩ এপ্রিল) পঞ্চগড় ১৮ বিজিবির সেকেন্ড ইন কমান্ড উপ অধিনায়ক (টুআইসি) মেজর রিয়াজ মুর্শেদ ও নীলফামারী ৫৬ বিজিবির (সিও) অধিনায়ক লে. কর্নেল আসাদুজ্জামান হাকিম এবারও সীমান্তে মিলনমেলা না হওয়ার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, গত বছরের মতো এ বছরও মিলনমেলার ব্যাপারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও প্রশাসনের কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। তাই এবারও সীমান্তে দুই বাংলার মিলনমেলা বসছে না। ৬ষ্ঠ বারের মতো বন্ধ থাকছে এই মিলনমেলা।

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলের মানুষের ঐতিহ্য সীমান্তের কাঁটাতারে দুই বাংলার মিলনমেলা। করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন কারণে পঞ্চগড় সীমান্তে দুই বাংলার কাঁটাতারের এ মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। সাধারণত বাংলা নববর্ষের প্রথম ও দ্বিতীয় দিন সীমান্তে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এই মিলনমেলা। জেলার অমরখানা, শুকানি, মাগুরমারি ও ভূতিপুকুর সীমান্তসহ বেশ কিছু পয়েন্টে কাঁটাতারের পাশে প্রায় ১০-১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দুই বাংলার মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ মিলনমেলায় দুই দেশের হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। এপার-ওপারের স্বজনরা কথা বলেন ও ভাব বিনিময় করেন। বিনিময় করেন বিভিন্ন উপহার সামগ্রী। সেই আবেগতাড়িত কথাবার্তা ও উপহার বিনিময়ের দৃশ্য দেখা মিলবে না এবারও।

জানা যায়, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের মধ্য দিয়ে ভাগ হয়ে হয়ে যায় বাংলাদেশ-ভারতের হাজার হাজার পরিবার। তাই উভয় দেশের স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হতে গেলে পাসপোর্ট করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ভারত যেতে হয়। যা বেশ ব্যয়বহুল ও সময়ের ব্যাপার। তাই বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সহযোগিতায় সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ায় মিলনমেলার সুযোগ করে দেওয়ায় এ দিনটির অপেক্ষায় প্রহর গোনেন দুই পাড়ের স্বজনরা।

সর্বশেষ ২০১৭ সালে পয়লা বৈশাখে বিজিবি ও বিএসএফের সহযোগিতায় পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা সীমান্তের ৭৪৪ নং মেইন পিলারের ১ থেকে ৭ নং সাব-পিলার পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার নো-ম্যান্সল্যান্ড এলাকার কাঁটাতারের বেড়ার দুই পাশে অনুষ্ঠিত হয়েছিল মিলনমেলা। মিলনমেলায় অংশ নিয়েছিল পঞ্চগড়সহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা ও ভারতের জলপাইগুড়ির রায়গঞ্জ থানার খালপাড়া, ভিমভিটা, গোমস্তাবাড়ি ও বড়ুয়াপাড়া, চাউলহাটিসহ বিভিন্ন এলাকার লাখো মানুষ।

নাড়ির টানে বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি, চাচা-চাচি, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনদের সান্নিধ্য আর মনের মাঝে দীর্ঘদিনের জমে থাকা অব্যক্ত ভাব বিনিময় করতে দেখা যায় তাদের। কাঁটাতারের বেড়ার দুই পাশে কেউ কাউকে ছুঁয়ে দেখতে না পারলেও একে অন্যকে হাত বাড়িয়ে কাছে টানার চেষ্টা, আনন্দে কান্নায় ভেঙে পড়া, দেখা-সাক্ষাৎ, কথোপকথন আর খোশগল্পে মেতে উঠতে দেখা যায়। একে অপরের হাতে ইলিশ মাছ, আপেল-কমলা, শাড়ি-লুঙ্গি, বিস্কুট-চানাচুর, জুস, বিড়ি-সিগারেটসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও বিনিময় করেন তারা। স্বজন ও পরিচিতদের দেখে অনেকে আবেগে কেঁদে ফেলেন। ফিরে যাওয়ার সময় স্বজনদের একে অপরকে অপলক তাকিয়ে থাকতেও দেখা গিয়েছিল সেই মিলনমেলায়।