ঢাকা বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪

Popular bangla online news portal

Janata Bank
Rupalibank

মানুষের পেটে লাথি দিতে চাই না : শামীম ওসমান


নিউজ ডেস্ক
১৭:২৫ - সোমবার, এপ্রিল ৮, ২০২৪
মানুষের পেটে লাথি দিতে চাই না : শামীম ওসমান

নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে শহরের নাগরিক সমস্যা নিরসনে মতবিনিময় সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (৮ এপ্রিল) শহরের চাষাঢ়ায় বিকেএমইএ ভবনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বহুল আলোচিত হকার সমস্যা ছাড়াও ডিএনডি প্রজেক্ট নিয়েও আলোচনা হয়। উদ্ভূত সমস্যাগুলো নিরসনে ঈদ উল ফিতরের পরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আয়োজনে আলোচনা সভা আয়োজনের কথাও উঠে আসে। হকার ইস্যুতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান জানান, তিনি মানুষের পেটে লাথি দিতে চান না। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী দাবি করেন, শামীম ওসমান চাইলেই হকাররা পালাবে। 

মতবিনিময় সভার শুরুতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান বলেন, যানজটমুক্ত সুন্দর শহরের জন্য উদ্যোগ নেওয়ার নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবকে ধন্যবাদ। আমরা চেষ্টা করেছি কাজ করার জন্য। হকারদের বসতে দেওয়ার জন্য জায়গা করে দিয়েছি। তাদের কাছে আমাদের একটাই দাবি ছিল, বঙ্গবন্ধু সড়কে তারা বসতে পারবে না। কিন্তু এরপরেও তারা বসেছে, পুলিশ এসে সরিয়ে দিয়েছে। অনেকটা চোর-পুলিশ খেলা চলেছে সেখানে। এলাকারই কিছু ছেলেপেলে তাদেরকে বসিয়ে টাকা নিচ্ছিলো। এটি একটি শিল্পাঞ্চল, বহিরাগত অনেক মানুষ এখানে। আমাদের মেয়র ঘোষণা দিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু সড়কের দুই পাশ সবুজ করে দেওয়া হবে যাতে দোকান বসলেও জনগণের অসুবিধা না হয়। অনেকেই প্রশ্ন করেন, নালিশ দেন, ধন্যবাদ জানান, কিন্তু মাথায় রাখতে হবে সামনে বর্ষাকাল। হকারদেরকে কোরবানি ঈদ পর্যন্ত বসতে দিতে হবে। যা-ই হয়েছে, আমরা ভুলে গিয়েছি। এই কাজগুলো আসলে আমাদের আওতায় নয়, এটি সিটি করপোরেশন, পুলিশ প্রশাসনের কাজ, কিন্তু যতোটুকু সহযোগিতা আমরা চেয়েছিলাম, ততোটা আমরা পাইনি। আমাদের পুলিশের সংখ্যা কম। আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। আমরা কাজের চেষ্টা করেছি। ঈদের পরে আমরা আবার বসবো। মেয়রকে অনুরোধ করছি, আপনি বসার ব্যবস্থা করুন।

এরপর বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেন, মতবিনিময় করতে গেলে যাদের এখানে উপস্থিত থাকতে হবে, তারাই এখানে নাই। এখানে আলোচনার বিষয়টি বলা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জের যানজট সমস্যা নিরসন। আমার কাছে তো মনে হয়, জেলায় যানজট ছাড়া আর কোনো সমস্যাই নেই। আমি স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড লোক। এখানে যানজটই একমাত্র সমস্যা, আর কোনো সমস্যাই নেই- এটা আমি মেনে নেব না। আরও অনেক সমস্যা আছে। আলোচনা হলে সবগুলো নিয়েই হওয়া উচিত। যানজট নিয়ে সিটি করপোরেশন তাদের প্রয়োজনীয় তাগিদপত্র জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপারের কাছে দিতে পারেন। আমার বড় ভাই যানজট নিরসনে ৪৫ লাখ টাকা দিয়েছেন ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা নিয়ে। আমার প্রশ্ন হলো, টাকা কেন দিতে হবে! সরকার তো টাকা দেয়। এটা তো এমপির দায়িত্ব না।  আমি তখনও বলেছি, এখনও বলি-হকার বসলে সবখানে বসবে, না বসলে কোথাও বসবে না। আমি মানুষের পেটে লাথি দিতে চাই না। আমার মনে হয়, মধ্যখান থেকে একটা পন্থা বের হবে। সেটি সিটি করপোরেশনেরই বের করা উচিত।

উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বর্ণনা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়ক ১২০ ফিট চওড়া হচ্ছে। একেএম শামসুজ্জোহা সড়ক হচ্ছে, নাগিনা জোহা সড়ক হয়েছে। আমাদের ডিএনডি প্রজেক্ট জুন মাসে শেষ হবে। কিন্তু লোকাল ড্রেনেজগুলো কানেক্টেড করতে হবে ডিএনডির সঙ্গে, তা না হলে পানি সরতে পারবে না। এ ব্যাপারে মেয়রকে আমি লিখিতভাবে জানাব। আরেকটি সুখবর দিয়ে রাখি, নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের পাশে ২০০ কোটি টাকার একটি সম্পত্তি পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি কাগজ জমা দিয়েছি এ বিষয়ে। সেখানে যাতে হার্ট ইনস্টিটিউট, ট্রমা সেন্টার, নিউরো সেন্টার যাতে হয়। সেইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ যাতে দ্রুত হয় সেটিও বলেছি। আশা করি, আল্লাহ আমাদেরকে কবুল করবেন। এমনভাবে যেন কাজ করে যেতে পারি যাতে মৃত্যুর পরেও মানুষ দোয়া করেন। 

বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান আমাদের এমপি শামীম ওসমান ভাই। সারাদেশে উনার সুনাম রয়েছে। অন্যদিকে একই পরিবারের সন্তান এমপি সেলিম ওসমান ভাই আমাদের অভিভাবক। আর আমাদের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী আপা নারী নেতৃত্বের আইডল। এখানে যারা একত্রিত হয়েছেন, তাদেরকে আমরা সমর্থন জোগালেই নারায়ণগঞ্জবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন সম্ভব। তাদের কারণেই জেলায় এত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পন্ন হচ্ছে। 

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে এসে বক্তব্যে নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, হকার সমস্যা সারাদেশেই আছে। বিভিন্ন জায়গায় এটি সমাধানও হয়েছে, কিন্তু যারা এতো বড় একটি জায়গা দেওয়ার পরেও বঙ্গবন্ধু সড়কে যাচ্ছে, তাতে আমাদেরকে একপ্রকার ইনসাল্ট (অপমান) করা হচ্ছে। কে বা কারা করছে এটি, তা জানি না, কিন্তু এসব মেনে নেওয়া যায় না। এক নম্বর রেল গেইটের উপর বিশাল বড় মার্কেট হচ্ছে যেটা রেলের প্রাক্তন কর্মচারীরা করছেন। আমরা এ বিষয়ে কেউ কিছু জানি না, বলছিও না। একটা শহরে যেখানে এতগুলো মানুষকে চেষ্টা করেও আমরা জায়গা দিতে পারছি না। এখানে সরকারিভাবে একটা হাব হওয়ার কথা। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে এখানে একটি বড় ভবন হওয়ার কথা। এখানে রেলস্টেশনে, নৌ সুবিধা ও বাস টার্মিনাল থাকার কথা। 

মন খুলে কথা বলতে না পারার আক্ষেপ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আপনারা একই মঞ্চে ডাকছেন, আসছি, কথা বলছি, কিন্তু এর মানে তো এই না যে এই শহরে যে যা খুশি তাই করবে। অনেক কাজই করতে পারি না, অনেক কথাই মন খুলে বলতে পারি না। চেষ্টা করছি সবার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে। তাতে কি অন্যান্য সংস্থা এসেও যা খুশি করবে, আমাদের অধিকার হরণ করবে আর স্থানীয় লোকজন চেয়ে চেয়ে দেখবে। জেলায় সমস্যা তো খুব বেশি দেখি না। যে দুয়েকটি সমস্যা আছে, সেগুলো যদি সেলিম ভাই ও শামীম ভাই বসে শুধু বলে দেয়, তাহলে তো তাৎক্ষণিকভাবে হয়ে যায়। শামীম ভাই আমাকে ফোন করছিল। আমি বলছি, ভাই আপনি যদি বলেন কালকে থেকে হকার বসবে না বঙ্গবন্ধু রোডে, তাহলে আর একজনও বসবে না। আপনি খালি এইটা বলেন দাঁড়িয়ে। শামীম ভাই এইটা বলবে না, কিন্তু বললে আসলেই থাকতো না। ওরা কই পালায়া যাবে খুঁজেও পাবে না। সেলিম ভাই আমাকে বারবার বলেন মাথা ঠাণ্ডা করার জন্য, আমি মোটেই মাথা গরম করছি না। আর সিদ্ধিরগঞ্জে লেক ও পানি সংরক্ষণ করছি বলেই নারায়ণগঞ্জ বেঁচে থাকবে। সেনাবাহিনী কাজ শেষ করলেই যেখানে যেখানে ড্রেন কানেক্টেড করা দরকার, সেগুলো আমরা করব।

আইভীর বক্তব্য শেষে ফের মাইক্রোফোন হাতে নেন শামীম ওসমান। এই পর্যায়ে তিনি বলেন, রাজনীতি করতে এসেছি সাধারণ গরিব মানুষের জন্য। মানুষের পেটে লাথি দিতে চাই না। জোর খাটিয়ে কোনো কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব না। যদি আমি আশ্রয় দিতাম তাহলে তারা একজায়গায় বসতো। আজকেও আমি তাদেরকে ধমক দিয়ে এসেছি যেন তারা ওদিকে না যায়। আজকে আমরা যাদের ব্যাপারে কথা বলছি, তারাও কিন্তু মানুষ। কে দেশী আর কে বিদেশী এসব কথা আমার ভালো লাগে না। নারায়ণগঞ্জে অন্য জেলা থেকে লাখ লাখ লোক এসে কাজ করছে। একটা বাচ্চা যখন তার বাবাকে খাবার দিতে পারেন না, তার কষ্টটা আমি ২০০১ সালের পরে বুঝেছি। তাই এই ধরনের কোনো কাজ করা আমার সম্ভব না।

নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিল্লাল হোসেন রবিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবু চন্দন শীল, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান সাদিক শাওন, নাসিক কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও শওকত হাশেম শকু প্রমুখ।