ঢাকা বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪

Popular bangla online news portal

Janata Bank
Rupalibank

সীমান্তের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ বাহন বাইসাইকেল


নিউজ ডেস্ক
৪:১৬ - শনিবার, অক্টোবর ২২, ২০২২
সীমান্তের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ বাহন বাইসাইকেল

মেহেরপুরের সীমান্ত অঞ্চলের নারী শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের নিরাপদ বাহন এখন বাইসাইকেল। যাতায়াতের ঝামেলা এড়াতে এবং দীর্ঘ পথ হাঁটার কারণে অনেক শিক্ষার্থী ছিল বিদ্যালয় বিমুখ। পরে ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় কিছু শিক্ষার্থীর মাঝে বাইসাইকেল বিতরণ করা হয়। পরে তাদের দেখাদেখি ও নিরাপদ বাহন মনে করে অন্য অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের বাইসাইকেল কিনে দিচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সীমান্তবর্তী তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম থেকে আসা প্রায় ১২০০ শিক্ষার্থী এখানে লেখাপড়া করে।

বিদ্যালয়গামী এসব শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে যেতে হয় হেঁটে, অটোভ্যান কিংবা আলমসাধুর মতো ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনে। এতে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনার মুখে পড়তে হতো শিক্ষার্থীদের। বিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য নেই উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, রাস্তায় তেমন গাড়িও চলে না। ফলে সময় মতো বিদ্যালয় যেতে শিক্ষার্থীদের পড়তে হতো নানা বিড়ম্বনায়। এসব কারণে বিদ্যালয় থেখে ঝরে পড়ছিল অনেকে শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের কথা বিবেচনা করে সরকারি প্রকল্পের সহায়তায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনা মূল্যে বাইসাইকেল বিতরণ করা হয়। তবে তা সামান্য হলেও একে অপরের দেখাদেখি অভিভাবকরা তাদের ছেলে-মেয়েদের কিনে দিয়েছেন বাইসাইকেল। 

বিভিন্ন গ্রাম থেকে সারিবদ্ধভাবে বিশেষ করে মেয়েরা বাইসাইকেল চড়ে যাতায়াত করছে বিদ্যালয়ে। একই পোশাকে মেয়েরা বিদ্যালয়ে যাতায়াত করায় এক দিকে যেমন রাস্তার শোভাবর্ধন হচ্ছে অন্যদিকে বিড়ম্বনা কমেছে শিক্ষার্থীদের। প্রতিদিনের যাতায়াত ভাড়াও লাগছে না। ফলে পরিবেশবান্ধব বাইসাইকেল হয়ে উঠেছে সীমান্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ বাহন। 

বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী রোকসানা খাতুন বলে, আমার বাড়ি করমদী গ্রামে। আমাদের বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব ৫ কিলোমিটার। এক সময় ভ্যানে ও হেঁটে স্কুলে যাতায়াত করতাম। তখন ঠিকমতো ক্লাসে উপস্থিত হতে অসুবিধা হতো। অভাবের সংসারে যাতায়াত ভাড়া যোগাড় করতে হতো অনেক কষ্ট করে। কিছু দিন পর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আমাকে একটি বাইসাইকেল দেওয়া হয়। বাড়ির আঙিনায় সাইকেল চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়ে স্কুলে যাতায়াত শুরু করি। আমার দেখাদেখি আমাদের গ্রামের অনেক মেয়েই বাইসাইকেল কিনে আনে। 

পলাশীপাড়া গ্রামের স্কুলছাত্রী মিম আক্তার বলে, আমাদের গ্রাম থেকে তিন কিলোমিটার দূরে বিদ্যালয়ে যেতে হয়। ভাঙাচোরা রাস্তা এবং সময়মতো ভ্যানও পাওয়া যায় না। হেঁটেই বিদ্যালয়ে যেতে হয়। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি বাইসাইকেল উপহার পেয়ে আমি এখন নিরাপদে বিদ্যালয়ে যেতে পারছি। 

অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী জুবাইদা বলে, আমার কয়েকজন সহপাঠী বাইসাইকেল উপহার পাওয়ার পর আমার বাবা আমাকেও বাইসাইকেল কিনে দিয়েছেন। সকলে একসঙ্গে বিদ্যালয়ে যেতে পারছি। এতে খুব ভালো লাগে।

নবম শ্রেণির ছাত্রী ও খাসমহল গ্রামের এরিনা বলে, আমাদের গ্রাম থেকে বিদ্যালয় অনেক দূরে। বিদ্যালয়ের প্রায় সকলেই বাইসাকেল ব্যবহার করায় আমার পরিবার থেকে একটি সাইকেল কিনে দিয়েছে। সকলে মিলে একসঙ্গে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করায় বখাটেরা আমাদের বিরক্ত করতে পারে না। 

তেঁতুলবাড়িয়া ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিসুজ্জামান জানান, ছাত্রীদের বিদ্যালয়মুখী করার জন্য চেয়ারম্যান সাহেব ও স্কুল কর্তৃপক্ষ মিলে বাইসাইকেল উপহার দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এখন কোনো বিড়ম্বনা ছাড়ায় নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে পারছে।

ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা বিশ্বাস জানান, তেঁতুলবাড়িয়া ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৪০০ জনেরও বেশি গরিব মেধাবী ছাত্রীর যাতায়াত সুবিধার জন্য সরকারি প্রকল্প ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাইসাইকেল দেওয়া হয়েছে।

সরকার নারী শিক্ষার ওপর জোর দিচ্ছে। আমি সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন তেঁতুলবাড়িয়ার শিক্ষার হার শতভাগ করতে বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছি। 

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজুল হোসেন বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিদ্যালয় প্রধান ও শিক্ষার্থীদের পরিবার থেকে নেওয়া উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। ওই বিদ্যালয়ে অনেক ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করে। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। বাইসাইকেল চড়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করার সুবিধার্থে শতভাগ উপস্থিতি হবে এমন প্রত্যাশার পাশাপাশি এমন একটি উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই।