ঢাকা সোমবার, মে ২০, ২০২৪

Popular bangla online news portal

Janata Bank
Rupalibank

মধ্যরাতে যশোর রেলস্টেশনে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য


নিউজ ডেস্ক
৪:৫৫ - শুক্রবার, মে ১০, ২০২৪
মধ্যরাতে যশোর রেলস্টেশনে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য

যশোর রেলওয়ে স্টেশন এলাকা এবং রেলগেট বরাবরই একটি সন্ত্রাসীপ্রবণ এলাকা। এই এলাকায় অনেক সময় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, হত্যাকাণ্ডের মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। কিছুদিন আগেও যশোর রেলওয়ে স্টেশনের ২নং প্লাটফর্মে রাতের আঁধারে ছুরিকাঘাতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। স্টেশন প্ল্যাটফর্ম এবং স্টেশন এলাকায় মাদকসেবীদের মাদক সেবনের অভিযোগও রয়েছে বেশ কিছুদিন ধরে।

এ ছাড়া রাতের অন্ধকারে যশোর রেলওয়ে স্টেশনে চাঁদাবাজির মহোৎসবে মাতে একটি চক্র। দীর্ঘদিন ধরে এমন অভিযোগ গভীর রাতে যশোরে ফেরা যাত্রীদের। তবে এসব বিষয় নিয়ে গোলযোগ বা বাড়তি ঝামেলার ভয়ে স্থানীয় প্রশাসনের নিকট অভিযোগ দেন না কেউ। অনুসন্ধানে জানা গেছে, যশোর স্টেশন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব বিস্তার করা প্রভাবশালী একটি মহলের ছত্রছায়ায় এ চাঁদাবাজির মহোৎসব চলে আসছে।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, ঢাকা ও উত্তরবঙ্গ থেকে যশোরে ফেরা যাত্রীরা গভীর রাতে রেলওয়ে স্টেশনে নামলে নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেক যাত্রী স্টেশন প্ল্যাটফর্মে রাত্রিযাপন করেন। স্টেশন প্ল্যাটফর্মে অবস্থান করতে হলে একটি চক্রের সদস্যরা এসে জনপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে অর্থ দাবি করে। অন্যথায় যাত্রীদের স্টেশন প্ল্যাটফর্মে গভীর রাতে অবস্থান করতে দেওয়া হয় না। ফলে অনেক যাত্রী বাধ্য হয়ে টাকা দিয়ে স্টেশনে অবস্থান করেন, আবার অনেক যাত্রী গভীর রাতে ছিনতাই, ডাকাতিসহ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্টেশন থেকে গন্তব্যে বেড়িয়ে পড়েন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনেক সময় স্টেশনে দায়িত্বরত জিআরপি পুলিশের সামনেই এ চাঁদাবাজির কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়। এ ছাড়া যাত্রীদের নিকট টিকিট চেক করার কথা বলে টাকা নেওয়া এবং হয়রানির অভিযোগ রয়েছে জিআরপি পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধেও।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্টেশনে ঝালমুড়ি বিক্রি করা একজন বলেন, রাতের বেলা যখন কোনো ট্রেন আসে কিছু ছেলেপেলে প্ল্যাটফর্মের দুই প্রান্তে চলে যায়। এরপর যাত্রীরা স্টেশনে অবস্থান করলেই তারা যাত্রীদের কাছে টাকা দাবি করে এবং বিভিন্নভাবে হয়রানি করে।

তিনি আরও বলেন, অনেক সময় রেলওয়ে থানা-পুলিশের (জিআরপি) সদস্যরাও স্টেশনে নামা যাত্রীদের টিকিট চেক করে। তাদের কাছে টিকিট না পেলে অর্থ দাবি করে।

স্টেশনে ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রেতা আলী আকবর ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি অনেক সময় গভীর রাতের ট্রেনে চা বিক্রি করি। যে কয়দিন মাঝরাতে যশোরে নেমেছি সে কয়দিন দেখেছি বহিরাগত কিছু যুবক যাত্রীদের হয়রানি করে। মূলত নেশার টাকার জন্য এরা যাত্রীদের কাছ থেকে ধান্দাবাজি করে টাকা হাতানোর চেষ্টা করে।

জয়পুরহাটের সাংবাদিক চম্পক কুমার বলেন, আমি একদিন রাত ৩টার দিকে যশোর স্টেশনে নামি। এরপর স্টেশনে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর কয়েকজন যুবক এসে আমাকে বললো যে, স্টেশনের মধ্যে থাকতে হলে ১০০ টাকা দিতে হবে। অন্যথায় স্টেশন থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। আমি বাইরের জেলার মানুষ বলে ঝামেলা করিনি, টাকা দিয়ে ভোর ৫টা পর্যন্ত স্টেশনে অপেক্ষা করেছিলাম।

ঢাকার বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা রাসেল শেখ বলেন, আমি ঢাকা থেকে যে কয়বার ট্রেনে যশোর ফিরেছি সে কয়বার আমি এমন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। টাকা না দিয়ে আমি ঝুঁকি নিয়ে বের হয়ে যাই স্টেশন থেকে। ওইসব ছেলেদের সঙ্গে ঝামেলা করলে পরে বিপদ হতে পারে এজন্য কাউকে কিছু বলি না।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, বহিরাগত চক্রটি স্টেশন প্ল্যাটফর্মের সিসি ক্যামেরার আওতায় এ ধরনের কর্মকাণ্ড করে না। তাদের টার্গেট থাকে স্টেশনের দুই প্রান্তে সিসি ক্যামেরার বাইরের অংশে। এই চক্রটি রাত ১২টার পর থেকেই স্টেশনে অবস্থান করে। তাদের চলাফেরা দেখলেও রেলওয়ে থানা-পুলিশ (জিআরপি) তাদের কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করে না। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এ নীরব চাঁদাবাজি চলে স্টেশন ঘিরে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আয়নাল হাসান বলেন, আমাদের কাছে এমন কোনো অভিযোগ আসেনি। স্টেশন প্ল্যাটফর্মে সিসি ক্যামেরা আছে। আমরা এমন কিছু ঘটলে সিসি ক্যামেরায় দেখতে পেতাম।

এ বিষয়ে যশোর রেলওয়ে থানা-পুলিশের ইনচার্জ মনিতোষ বিশ্বাস বলেন, রাতে যাত্রীদের নিকট থেকে টাকা আদায়ের বিষয়ে আপনার নিকট থেকেই প্রথম জানলাম। এ বিষয়ে আমরা অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।

তিনি আরও বলেন, স্টেশনে ফেরত যাত্রীদের টিকিট চেক করার এখতিয়ার রেলওয়ে থানা-পুলিশ সদস্যদের নেই। এটি একমাত্র টিটি চেক করতে পারেন।