ঠাকুরগাঁওয়ে শিশুদের নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া ও জ্বরসহ ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। ব্যাপক হারে শিশুরা ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ায় অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। হঠাৎ করে রোগীর চাপ বাড়ায় হাসপাতালে দেখা দিয়েছে ওষুধ, স্যালাইন ও শয্যাসংকট। পর্যাপ্ত ওষুধ ও স্যালাইন না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছে রোগী ও স্বজনেরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২৫০ শয্যা হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে শয্যার সংখ্যা মাত্র ৪৫টি। বর্তমানে শিশু বিভাগে ভর্তি রয়েছে মোট ১৮৫ শিশু। তাদের মধ্যে অন্তত ৭১ শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। এছাড়া গত এক মাসে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৭ শিশুর মৃত্যু হয়।
মারা যাওয়া শিশুদের মধ্যে প্রিম্যাচিউরড বা ওজনে কম থাকা নবজাতক ও অপরিপক্ব শিশু রয়েছে ১৩ জন, যাদের বয়স এক থেকে দুই দিন। ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে দুইজন, হার্টের সমস্যা নিয়ে একজন ও খিচুুনিসহ জ্বর নিয়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়।
হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, শিশু ওয়ার্ডের শয্যাগুলোর একটিও ফাঁকা নেই। কোনো কোনো শয্যায় একাধিক শিশুকে রেখে চিকিৎসা চলছে। বেশিরভাগ শিশুরাই নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত। শয্যা সংকুলান না হওয়ায় অনেক শিশুকে মেঝেতে শুইয়ে রেখে স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
পীরগঞ্জ উপজেলা লোহাগেড়া গ্রামের গৃহবধূ আখি মনি ঠান্ডা, জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত শিশু আহাদ ইসলাসকে নিয়ে চার দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। তিনি বলেন, ওষুধ কেনার টাকা নেই। গতকাল ডাক্তার ওষুধ লিখে দিছে ওই ওষুধ হাসপাতালে নেই। বাইরে থেকে কিনে আনবো যে আমার কাছে সেই টাকাও নেই। তাই বাবুর চিকিৎসা বন্ধ আছে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা লায়লী বেগম নামে এক শিশু রোগীর মা বলেন, শয্যার অভাবে মেঝেতে শয্যা পেতে থাকতে হচ্ছে। এতে শিশুটি আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
বালিয়াডাঙ্গী থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত এক বছর বয়সী কন্যা শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে মঙ্গলবার বিকেলে ভর্তি হয়েছেন উত্তম কুমার। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত এক হাজার টাকা ওষুধ কিনেছি। হাসপাতাল থেকে তেমন কোনো ওষুধ দেয়নি।
রফিকুল ইসলাম নামে আরেক শিশুর অভিভাবক বলেন, দিনমজুরি করে সংসার চালায়। হাসপাতালে ভর্তি থেকেও বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়। টাকা নেই, কষ্ট হয় তবুও সন্তানকে তো বাঁচাতে হবে।
শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টার্ফ নার্স শিল্পী আখতার বলেন, ১৫ নার্স ও তিনজন চিকিৎসক দিয়ে দৈনিক প্রায় ১৮০ থেকে ২০০ জন ভর্তিকৃত শিশু রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন শিশু ওয়ার্ডে ৪৫ শয্যার বিপরীতে ১০০ জনের ওপর নতুন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। বিপুলসংখ্যক রোগী সামাল দিতে আমাদের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেজ্ঞ ডা. সাজ্জাদ হায়দার শাহীন বলেন, শীতের সময়ে ভাইরাসের প্রবণতা বেড়ে যায়। যার ফলে শিশুরা ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা কম বলে তারা সহজে আক্রান্ত হচ্ছে।
এসব রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে শিশুদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি ধুলোবালি এড়িয়ে চলতে হবে। আর প্রয়োজনীয় সব টিকা দিতে হবে। সেই সঙ্গে শিশুর শরীর ঘামলে তা মুছিয়ে দেওয়া এবং যাতে ঠান্ডা না লাগে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।