জীবনের বাঁকবদল বুঝি এমনই হয়। একসময় যিনি ছিলেন টেনিস কোর্টের নিজ দেশের বড় তারকা। ছিলেন শীর্ষ বাছাইদের একজন। কিন্তু এই মুহূর্তে আলেকজান্ডার দোপোলভের কাছে এসব অতীত। রাফায়েল নাদালের মত কিংবদন্তি টেনিস খেলোয়াড়কে হারানো দোপোলভ এখন ব্যস্ত আছেন ইউক্রেনের হয়ে যুদ্ধ করতে।
যুদ্ধ শুরুর পর এক প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গেন দেখা হয় দোপোলভের। ছয় ফুট দূর থেকে নিখুঁত সার্ভে তাকে মুগ্ধ করেছিলেন সাবেক এই টেনিস তারকা। এরপরেই তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ক্রোয়েশিয়া। সেখান থেকে শেষ করেন প্রাথমিক ট্রেনিং। এরপর চলে আসেন নিজ দেশ ইউক্রেনে। শুরু হয় দোপোলভের যোদ্ধা জীবন।
এটিপির ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে এক সময়ে ১৩ নম্বর ছিলেন অ্যালেক্সান্ডার দোপোলভ। হারিয়েছিলেন রাফায়েল নাদালকে। ইউক্রেনের ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই টেনিস তারকা ২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে কোয়ার্টার ফাইনালিস্ট ছিলেন। ২০২১ সালে অবসর নিয়ে ফেলেন পেশাদার ক্যারিয়ার থেকে। তবে কথা ছিল চ্যারিটি ম্যাচ কিংবা টেনিসের সঙ্গে ব্যস্ত থাকার।
কিন্তু দেশের বিপর্যস্ত অবস্থায় ২০২২ সালের মার্চে সেনায় যোগ দেন দোপোলভ। শিখে নেন অস্ত্রচালনা। দোপোলভ জানান, ‘গত বছর যুদ্ধের ময়দানে খুব কঠিন একটা সময় গিয়েছে। খুব কাছ থেকে গুলির লড়াই দেখেছি। বুঝতে পারছিলাম ওরা বুঝে গিয়েছে আমি কোথায়। গুলি চালাতে চালাতে এগিয়ে আসছে। বন্দুক থেকে গুলি বার হওয়ার পর একটা শিসের মতো আওয়াজ হয়। তার পরেই গুলিটা কোথাও গিয়ে লাগে। সেটার আওয়াজ পাওয়া যায়। শুধু আশা করা হয় গুলি যেন আমাদের থাকার জায়গায় না লাগে। গুলি যদি এক-দেড় মিটার উপর দিয়ে যায়, তাহলে কোনও অসুবিধা নেই। কারণ আমরা মাটির নীচে রয়েছি। কিন্তু যদি লেগে যায় তাহলে কী হবে বলা কঠিন।’
যুদ্ধে সবচেয়ে ভয়ের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘সবচেয়ে খারাপ দিন ছিল, যে দিন মর্টার হামলা হয়েছিল। অহেতুক গুলি করা হত। মাঝে মাঝে দু’তিনটে গুলি করা হত। সেদিন একসঙ্গে ২০টি গুলি করা হয়। কোনক্রমে বেঁচে গিয়েছিলাম।’
দোপোলভ এখন জাপোরিঝিয়াতে রয়েছেন। সেখান থেকে যাবেন রাজধানী কিয়েভে। সাবেক এই টেনিস তারকার এক্স (সাবেক টুইটার) প্রোফাইলে পুরোটা জুড়েই এখন আছে যুদ্ধের খবরাখবর। নিজের টেনিস খেলার একটি ছবি থাকলেও অ্যাকাউন্ট ঘুরেই বোঝা যায়, মাঠের খেলার চেয়ে যুদ্ধেই নজর বেশি তার।