তরিকুর রহমান সজীব
গত দুই দশকের ব্যবধানে সংবাদ পরিবেশনের ধারায় এসেছে আমূল পরিবর্তন। সংবাদের উৎস বলতে ছাপা সংবাদপত্রের যে দাপট ছিল, সেই জায়গাটি অনেকটাই দখল করে নিয়েছে অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো। কেবল ছাপা পত্রিকা নয়, মাল্টিমিডিয়া বা অডিও-ভিজ্যুয়াল কনটেন্টের বদৌলতে টেলিভিশন চ্যানেলের আধিপত্যও খর্ব হয়েছে অনলাইন পোর্টালের কাছে। পত্রিকার ছাপা অক্ষর কিংবা টিভির পর্দার চেয়ে সংবাদের সন্ধানে এখন মানুষ অনেক বেশি কম্পিউটার বা ল্যাপটপের ইন্টারনেট ব্রাউজার কিংবা মোবাইল স্ক্রিনের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। এই প্রবণতা কেবল বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বের জন্যই প্রযোজ্য।
অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো ঠিক যে জায়গাটিতে ছাপা সংবাদপত্রের চেয়ে সংবাদ পরিবেশনের দিক থেকে এগিয়ে সেটি হলো দ্রুত সংবাদ পাওয়ার নিশ্চয়তা। ছাপা পত্রিকায় আগের দিনের খবর পড়তে হয়। সেখানে অনলাইন পোর্টালগুলোতে খবর পাওয়া যায় ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই। টেলিভিশনেও তাৎক্ষণিক খবর পাওয়ার সুবিধা থাকলেও এ ক্ষেত্রে অনলাইন এগিয়ে বহনযোগ্যতায়। কারণ হাতে স্মার্টফোন আর তাতে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে স্থান-কালের কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই সংবাদ থাকে হাতের মুঠোয়। পাশাপাশি মাল্টিমিডিয়া কনটেন্টের কল্যাণে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর প্রতিযোগীও হয়ে উঠছে অনলাইন।
অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর এমন বহুবিধ সুবিধার মধ্যেই গত এক দশকে সব ধরনের যোগাযোগেরই বড় একটি মাধ্যমে পরিণত হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও এক্স (সাবেক টুইটার)। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় নিলে অবশ্য এক্সের (টুইটার) চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে ফেসবুক। খবরের উৎস হিসেবেও এখন ফেসবুক অন্যতম জায়গা দখল করে নিয়েছে। অনলাইন পোর্টালগুলো নিজেরাই খবর ছড়িয়ে দিতে ফেসবুককে অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে। পাশাপাশি পাঠকরাও হরদম ফেসবুকে নিউজ শেয়ার করে চলেছেন। এর পাশাপাশি নানা ধরনের তথ্যও ছড়িয়ে দিতে ফেসবুককেই ব্যবহার করা হচ্ছে প্রধান মাধ্যম হিসেবে। ঠিক এই জায়গাটিতেই সংবাদ এবং সূত্র ও যাচাইবিহীন তথ্য নিয়ে গোল বেঁধেছে।
যেকোনো ফেসবুক ব্যবহারকারী চাইলেই কারও কাছ থেকে শোনা কিংবা যেকোনো সূত্রে পাওয়া তথ্য ফেসবুকে শেয়ার করতে পারছেন। কিন্তু যথাযথ সূত্র থেকে যাচাই করার আগ পর্যন্ত কোনো নিউজ পোর্টালই সেটি সংবাদ হিসেবে পরিবেশন করতে পারে না। ফলে যাচাইবিহীন তথ্যটি সংবাদ আকারে পরিবেশনের আগেই তথ্য আকারে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ থাকে অনেক বেশি। বাস্তব অভিজ্ঞতা বলছে, সেটি ঘটেও থাকে হরহামেশাই।
ধরা যাক, কোথাও কোনো এক কারণে যেকোনো দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটছে। এই ঘটনাটিকে সংবাদ হিসেবে পরিবেশন করতে হলে একজন সংবাদকর্মীকে সেই ঘটনায় বিবদমান দুই পক্ষের পরিচয় জানতে হবে, জানতে হবে সংঘর্ষের কারণ। সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা থাকলে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য জানতে হবে। সংবাদের আদর্শ মান শতভাগ পূরণ করতে হলে প্রয়োজন হবে দুই পক্ষের বক্তব্য, প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্য। সঙ্গে সংঘর্ষের সময়কার কিংবা ঘটনাস্থলের ছবি বা ভিডিও।
এখন এই সব তথ্য সংগ্রহ করে একজন সংবাদকর্মী প্রথমে সংবাদটি লিখবেন। এরপর তিনি সেটি পাঠাবেন নিউজরুমে। সেখানে ডেস্কে দায়িত্বরত সহ-সম্পাদক সেটি সম্পাদনা করবেন। এরপর সংবাদটি প্রকাশ পাবে পোর্টালে। নিঃসন্দেহে প্রক্রিয়াটি মেনে সংবাদ প্রকাশ করতে চাইলে যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন আছে বৈকি।
প্রতিযোগিতার এই সময়ে এসে তাৎক্ষণিক খবর প্রকাশের তাড়া থেকে গোটা প্রক্রিয়াটিকে আরও সংক্ষেপ করার সুযোগও আছে। ঘটনাস্থল থেকে প্রতিবেদক বা প্রতিনিধি দ্রুত সংবাদ প্রকাশের জন্য নিউজরুমে দায়িত্বরত সহ-সম্পাদককে মোবাইল ফোনে কল করেই প্রয়োজনীয় ও সংক্ষিপ্ত কিছু তথ্য দিয়ে থাকেন। সহ-সম্পাদক সেই তথ্যগুলো নিয়ে খুব সংক্ষিপ্ত আকারে সংবাদটি প্রস্তুত করেন। ঘটনা বা ঘটনাস্থলের ছবি না থাকলে প্রতীকী ছবি ব্যবহার করে সহ-সম্পাদক সেটি প্রকাশ করে দেন।
এ ক্ষেত্রেও অন্তত সংঘর্ষের মূল কারণ, হতাহতের তথ্য এবং দায়িত্বশীল কারও না কারও বক্তব্য থাকতেই হয়। ঘটনা বা ঘটনাস্থলের ছবি না থাকলে প্রতীকী ছবি ব্যবহারের সুযোগ আছে। কিন্তু সংবাদটি যাচাই না করে এবং দায়িত্বশীল কারও বক্তব্য ছাড়া প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই।
এর বিপরীতে ফেসবুকে যে কেউ একই ঘটনা নিয়ে কোনো পোস্ট দিতে চাইলে তাকে কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতাই অনুসরণ করতে হয় না। তিনি যাচাই-বাছাই ছাড়াই যেকোনো তথ্য তার পোস্টে লিখে ফেলতে পারেন। তার জন্য সাধারণ বিবেচনায় তথ্য যাচাইয়ের কোনো দায় নেই। কিন্তু সেই দায় কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই বলেই অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো একই ঘটনায় যাচাইবিহীন তথ্য প্রকাশ করতে পারে না। আর সে কারণেই সময় বেশি লাগলেও সেই সময় অনলাইন পোর্টালকে দিতেই হয়।
এই যখন পরিস্থিতি, তখন অনেক সময়ই অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর তুলনায় তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথ্য আগে ছড়িয়ে পড়ে। আবার সম্পাদকীয় নীতি অনুযায়ী অনেক ঘটনা সংবাদ আকারে পরিবেশনের উপযোগীও থাকে না। ফেসবুকে সেব ঘটনার তথ্যও বিচরণ করে অবাধে। ফলে তুলনামূলক বিচারে ফেসবুকে তথ্যের বিচরণ বেশি। গোলমালটা এখানেই। কেননা এসব তথ্যের কোনটা যাচাই করা আর কোনটা নয়, তা নিয়েই যত বিপত্তি। সবার পক্ষে এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে যারা যাচাইহীন তথ্যকেও সংবাদ আকারে বিবেচনা করে থাকেন, তাদের কাছে ফেসবুক হয়ে ওঠে অনেক বেশি এবং দ্রুত তথ্য পাওয়ার অন্যতম উৎস এবং মাধ্যম।
গোলমাল রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি জায়গায়, যেখানে দায়ী খোদ অনলাইন পোর্টালগুলোই। প্রথমত, বাকিদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গিয়ে অনলাইন পোর্টালগুলোতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে খবর প্রকাশ করার তাড়া থাকে, বাস্তব অভিজ্ঞতায় সেই প্রতিযোগিতা শেষ পর্যন্ত দাঁড়ায় তাড়াহুড়ায়। আর এর ফলে পোর্টালগুলোও অনেক সময়ই নিজস্বভাবে তথ্য যাচাই না করেই প্রকাশ করে ফেলে। পরে যাচাই করতে করতে গিয়ে তথ্যের সত্যতা না পাওয়ায় সেই খবর মুছে ফেলার উদাহরণও কম নয়। অনেক সময় পোর্টালগুলো সাইটে খবর প্রকাশের আগেই নিজেদের ফেসবুক পেজে তথ্য প্রকাশ করে থাকে। সংবাদ প্রকাশের পর সেই সংবাদের লিংক হালনাগাদ করে দেওয়া হয়। আবার ফেসবুকে তথ্য প্রকাশের পর যাচাই করতে গিয়ে সেই তথ্য পরে পরিমার্জনের ঘটনাও ঘটে থাকে।
দ্বিতীয়ত, অনলাইন পোর্টালগুলো যখন জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে, তখন একের পর এক অনলাইন পোর্টাল গড়ে উঠতে থাকে। এর পেছনে কয়েকটি বিষয় ভূমিকা রেখেছে। যেমন— অবকাঠামোর দিক থেকে ছাপা পত্রিকার মতো বড় কলেবর না হলেও এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে বিনিয়োগ না করলেও কোনো না কোনো মাত্রায় অনলাইন পোর্টাল পরিচালনা করা সম্ভব। আবার অনলাইন পোর্টাল চালানোর জন্য কোনো ধরনের নীতিমালা বা নিবন্ধনের প্রয়োজনীয়তা ছিল না। ফলে যে পরিমাণে অনলাইন পোর্টাল গড়ে উঠতে থাকে, তাকে অনেকেই তুলনা করে থাকেন ব্যাঙের ছাতার মতো, যেখানে কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ ছিল না। অনেকেই একে ‘একটি পরিবার একটি অনলাইন পোর্টাল’ বলেও ব্যাঙ্গ করে থাকেন।
তৃতীয়ত, কপি-পেস্ট সাংবাদিকতা। প্রকৃত অর্থে একটি ছাপা সংবাদপত্রের নিউজরুমে যে পরিমাণ সংবাদকর্মীর প্রয়োজন হয়, অনলাইন নিউজ পোর্টালও সমতুল্য মানের সংবাদ পরিবেশন করতে চাইলে প্রায় একই পরিমাণ সংবাদকর্মীর প্রয়োজন। কিন্তু ‘ব্যাঙের ছাতার মতো’ অনলাইন পোর্টাল গড়ে উঠতে থাকলে আমরা দেখেছি অনেক পোর্টালেই পর্যাপ্ত পরিমাণে সংবাদকর্মী নেই। অনেক পোর্টালই নামমাত্র কর্মী দিয়ে পরিচালিত হতেও দেখেছি আমরা। কিন্তু এসব পোর্টালেও সংবাদের অভাব আমরা দেখিনি। সেটি কীভাবে সম্ভব? অভিজ্ঞতা বলছে, অনেক পোর্টালই, বলা যায় বেশির ভাগ ‘ছোট’ পোর্টালই নিজস্বভাবে সংবাদ তৈরি না করে প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত খবর কপি করে নিজেদের সাইটে প্রকাশ করে থাকে। এই প্রবণতাটি গণমাধ্যম জগতে ‘কপি-পেস্ট সাংবাদিকতা’ নামে বহুলভাবে পরিচিত।
চতুর্থত, ক্লিকবেইট সাংবাদিকতা। ছাপা সংবাদপত্রের মতো অনলাইন পোর্টালেরও আয়ের মূল উৎস বিজ্ঞাপন। এই বিজ্ঞাপনপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোন পোর্টালের সাইটে ভিজিটর তথা পাঠকের পরিমাণ কত, সাইটের খবর কী পরিমাণ পড়া হয়— এই বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর পাশাপাশি এখন গুগলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অ্যাডসেন্স, ফেসবুক, ইউটিউবও অনলাইন পোর্টালগুলোর আয়ের অন্যতম উৎসে পরিণত হয়েছে। ফেসবুক পেজে যে সাইটের ফলোয়ার যত বেশি কিংবা ইউটিউব চ্যানেলে যে সাইটের সাবস্ক্রিপশন যত বেশি, সেই সাইটের আয়ের পরিমাণও স্বাভাবিকভাবেই বেশি। ফলে খবর থেকে শুরু করে ভিডিও বা কনটেন্টে যত বেশি হিট বা ক্লিক বা ভিউ, আয়ের পরিমাণও তত বেশি। ফলে আয় বাড়াতে পোর্টালগুলোকে হিট, ক্লিক বা ভিউ বাড়ানোর দিকে মনোযোগী হতে দেখেছি। আর সেটি করতে গিয়েই সংবাদের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে কনটেন্ট। সেখানেই ‘দেখুন ভিডিওসহ’ কিংবা ‘এ কী করলেন অমুক’ ঘরানার শিরোনামগুলোর প্রবণতা আমরা দেখেছি। সংবাদ বা কনটেন্টের সঙ্গে আপাত সম্পর্কহীন শিরোনাম আমরা দেখেছি। সংবাদ হয়ে ওঠার সব শর্ত পূরণ না করার পরও সেগুলো আমরা প্রকাশ হতে দেখেছি। ফলে সচেতন পাঠকদের অনেক অনলাইন পোর্টাল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার বাস্তবতাও অস্বীকার করার মতো নয়।
পঞ্চমত, মুক্ত সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধকতা সামাজিক, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক প্রভাব। সামাজিক প্রভাব বিবেচনায় অনেক সময় এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও সে বিষয়ে অনেক সময় সংবাদ পরিবেশন করা হয় না। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণেও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করা হয় না। পোর্টালগুলো নিজেদের আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করতে অনেক সময় ব্যবসায়ী বা বিত্তশালী কারও অভিযোগ-দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে না। শুধু তাই নয়, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগের তথ্য পেয়ে ‘ব্ল্যাকমেইল’ করে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে কিছু কিছু পোর্টালের বিরুদ্ধে। রয়েছে আর্থিক সুবিধার বিপরীতে কাউকে নিয়ে আরোপিত সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগও। শেষোক্ত দুই অভিযোগ অবশ্য অন্য গণমাধ্যমগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এ ধরনের সেন্সরশিপ কিংবা আরোপিত সংবাদ বিশেষ করে অনলাইন পোর্টালগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতাকেও অনেক সময় প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়।
অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর ক্ষেত্রে এই নেতিবাচক নিয়ামকগুলোর কারণেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তথ্যগুলোর গুরুত্ব ক্রমেই বাড়ছে। সেই সুযোগে তথ্যের পাশাপাশি ভুয়া তথ্য ছড়ানোর হারও বাড়ছে এবং সেটি বৈশ্বিকভাবেই। এর আগে ২০১৬ সালে ফেসবুক-এক্সে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রভাবিত করার মতো গুরুতর অভিযোগের পক্ষেও প্রমাণ মিলেছে। অনলাইন পোর্টালগুলোতে যাচাইবিহীন তথ্য সংবাদ আকারে প্রকাশ হতে থাকলে ফেসবুকে ছড়ানো এরকম গুজব, ভুয়া তথ্য ও বানোয়াট তথ্যের প্রচারও বেড়েছে। আর এ ক্ষেত্রেই ভুয়া তথ্য বা গুজব ছড়ানোর সুযোগও বেড়েছে। সেসব তথ্য উঠে আসছে অনলাইন পোর্টালেও। সাম্প্রতিক সময়ে ‘ফ্যাক্ট চেকিং’ তথা তথ্য বা প্রকাশিত সংবাদ যাচাইও তাই গণমাধ্যমের অন্যতম অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে।
মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ও ইন্টারনেট যত বেশি ছড়িয়ে পড়ছে, ততই বাড়ছে সংবাদ প্রসারের বিস্তৃতি। এ পরিস্থিতিতে অনলাইন পোর্টালগুলো যদি নিজেদের ‘গোলমাল’গুলো সংশোধন না করতে পারে, তাহলে তাদের পক্ষে পাঠকের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখা ভীষণ কঠিন হয়ে পড়বে। ফেসবুককে এরই মধ্যে অনেকেই তথ্য বা খবরের উৎস হিসেবে গ্রহণ করতে শুরু করেছে। অনলাইন পোর্টালগুলো সংবাদের সত্যতার প্রতি শতভাগ সৎ না হতে পারে, তাহলে এসব পাঠক আরও অনেক বেশি ঝুঁকে পড়বে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রতিই, যেটি কোনোভাবেই পোর্টালগুলোর জন্য ইতিবাচক কোনো বিষয় নয়। আধুনিক যুগের প্রযুক্তির সুবিধা এখন সবার জন্য উন্মুক্ত। ফলে পোর্টালগুলোকে হিট-ক্লিকের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে প্রকৃত সংবাদের দিকেই, প্রযুক্তির ব্যবহার তাদের এই কাজকে অনেক সহজ করে দিতে পারে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে কেবল কপি-পেস্ট নয়, মৌলিক সাংবাদিকতার চর্চায় যেন পোর্টালগুলো মনোযোগী হতে পারে, প্রত্যাশা সেটিই।