খাদিজা ইসলাম:: আরবি চন্দ্র মাসের প্রথম মাস মহররম। ১৬০ কোটি মুসলমানের আবেগ -অনুভূতি মনের মণিকোঠায় গ্রথিত এই মহররম। ইসলামের ইতিহাসে হিজরি সনের এক গৌরবোজ্জ্বল নাম মহররম। খাতামুন নাবিয়্যিন,সাইয়্যিদুল মুরসালিন হুজুর পাক(সা.) ৬২২ খ্রিষ্টাব্দের রবিউল আউয়াল মাসে মদিনায় হিজরত করেন, কিন্তু এর প্রস্তুতি ও আকাবার শেষ বায়আতের পরবর্তী সময়ে হিজরতের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে প্রথম যে চাঁদটি উদিত হয়েছিল, তা ছিল মহররম মাসের। হিজরি সনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মুসলমানদের বিশেষ ঐতিহ্য নিহিত রয়েছে।
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে মহররম কে ঘিরে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বিদায় হজের ভাষণে সম্মানিত মাসগুলোর কথা করেছেন। আরবি চন্দ্র মাসের মধ্যে চারটি মাস মহাসম্মানিত। তন্মধ্যে ‘তিনটি মাস হলো ধারাবাহিক জিলকদ, জিলহজ ও মহররম, অপরটি হলো রজব।’ (বুখারি)
পবিত্র চারটি মাসকে বরকতময় ও সম্মানিত মনে করা হতো। এ মাসগুলোকে ‘আশ-শাহরুল হারাম’ বা অলঙ্ঘনীয় পবিত্র মাস বলা হতো। এ চারটি মাসে যেকোনো ইবাদতের সওয়াব বৃদ্ধি পায়। তেমনি এ সময়ে পাপাচার করলে এর ভয়াবহ পরিণাম ও কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হয়। এ মাসগুলোতে সব ধরনের যুদ্ধবিগ্রহ, ঝগড়া-ফ্যাসাদ, মারামারি, খুনোখুনি প্রভৃতি নিষিদ্ধ ছিল।
মহররম কে কেন্দ্র করে যেসব ঘটনা ঘটে তা হলো-
বহু নবী-রাসুল ইমানের কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমে মুক্তি ও নিষ্কৃতি পেয়েছিলেন। কারবালাসহ অসংখ্য তথ্যবহুল ঐতিহাসিক ঘটনা এ মাসে সংঘটিত হয়েছিল। ১০ তারিখ আশুরার সঙ্গে পুরো মহররম মাসের বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা রয়েছে। রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার আগে পবিত্র আশুরার দিনে রোজা রাখা ফরজ ছিল। পরে তা রহিত করে মাহে রমজানের রোজা ফরজ করা হয়। ইসলাম-পূর্বকালে বিভিন্ন জাতি নানা কারণে আশুরার দিন রোজা রাখত। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরত করে দেখতে পেলেন যে ইহুদিরা মহররমের ১০ তারিখ আশুরা দিবসে রোজা রাখছে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘এটা কোন দিন যাতে তোমরা রোজা রেখেছ? তারা বলল, এটা এমন এক মহান দিবস, যেদিন আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা (আ.) ও তাঁর সম্প্রদায়কে নাজাত দিয়েছিলেন, ফিরআউনকে তার সম্প্রদায়সহ ডুবিয়ে মেরেছিলেন। তাই হজরত মুসা (আ.) শুকরিয়া হিসেবে এদিন রোজা রেখেছেন, এ জন্য আমরাও রোজা রাখি। এ কথা শুনে নবী করিম (সা.) বললেন, ‘তোমাদের চেয়ে আমরা হজরত মুসা (আ.)-এর অধিকতর ঘনিষ্ঠ ও নিকটবর্তী।’ অতঃপর তিনি রোজা রাখলেন এবং অন্যদের রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)
প্রাক-ইসলামি যুগে মক্কার কুরাইশরা আশুরার দিনে রোজা রাখত। নবী করিম (সা.) বাকি জীবনে এদিন রোজা রাখতেন।
মহানবী সাঃ মদিনায় আগমনের পর রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার পর তিনি ঘোষণা করলেন, ‘আমি আশুরার দিন রোজা রাখতে আদিষ্ট ছিলাম, অতএব এখন তোমাদের কারও যদি ওই দিন রোজা রাখতে ইচ্ছা হয়, তবে তা রাখতে পারো।’ আশুরার দিন রোজা রাখলে ইহুদিদের সঙ্গে সাদৃশ্য হয়ে যায় বিধায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আগের দিন বা পরের দিন আরেকটি রোজা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুমিন মুসলমান ১০ মহররম আশুরা দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য উপলব্ধি করে এদিন ঐচ্ছিক রোজা পালন করে। আশুরার দিন নফল রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলে তিনি ঘোষণা দিলেন, ‘এ রোজা বিগত এক বছরের গুনাহের কাফফারা হয়ে থাকে।’ (মুসলিম ও তিরমিজি) অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘যে ব্যক্তি আশুরার রোজা রাখবে, আল্লাহ তার এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (আহমাদ)
মহররম মুসলিমের এক চেতনার নাম।শান্তির দূত। এ মাসে সমস্ত হারাম জিনিস থেকে বেচেঁ থাকা। সমস্ত প্রকার অশ্লীলতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। মহররমের শান মান মর্যাদা কে জীবনে বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রকৃত মুমিন হয়ে গড়ে ওঠা হোক মহররমের অঙ্গীকার।