নীলফামারীতে সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের গাড়িবহরে হামলার ঘটনার ১০ বছর পার হয়েছে গতকাল (১৪ ডিসেম্বর)। হামলায় আসাদুজ্জামান নূর প্রাণে রক্ষা পেলেও নিহত হন আওয়ামী লীগের চার নেতাকর্মী। ঘটনার ১০ বছর অতিবাহিত হলেও মামলার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই।
জানা গেছে, গত সাত বছর ধরে চার্জ গঠনের অপেক্ষায় আদালতে পড়ে আছে মামলাটি। মামলার ২০৬ আসামির মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। অন্যরা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আছেন। দীর্ঘ সময়েও মামলার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের স্বজনরা। ২০১৩ সালের এই দিনে জেলা সদরের টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ বাজারে এ হামলা চালায় জামায়াত-বিএনপি।
হামলায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন- টুপামারী ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী, টুপামারী ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা ফরহাদ হোসেন শাহ্ ও তার ছোট ভাই মুরাদ হোসেন শাহ্ এবং আওয়ামী লীগ কর্মী লিটন হোসেন লেবু। নিহতদের স্বজনদের অভিযোগ, আলোচিত ওই হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার ১০ বছরেও কোনো অগ্রগতি নেই। আসামিরা আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
সে সময় মামলাটি করেছিলেন নীলফামারী সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আকতার। তিনি বর্তমানে কর্মরত আছেন চট্টগ্রাম পিবিআইতে। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, মামলাটি নীলফামারী জজ আদালতে বিচারাধীন। ওই মামলার প্রথম সাক্ষী হিসেবে আমি এখনো সাক্ষীর সমন পাইনি।
এ বিষয়ে নীলফামারী জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অক্ষয় কুমার রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, মামলাটি প্রায় সাত বছর ধরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে চার্জ গঠনের অপেক্ষায় আছে। ২০১৭ সালের ৩০ মে মামলাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে বদলি হয়ে এ আদালতে আসে। উক্ত আদালতের একজন বিচারক দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় বিচারকাজের তেমন অগ্রগতি হয়নি। বর্তমানে সেই সমস্যা কেটে গেছে। চলতি বছরের ১৩ নভেম্বর মামলাটির চার্জ গঠনের ধার্য তারিখ ছিল। সেদিন সকল আসামি উপস্থিত না থাকায় আগামী বছরের ২৭ মার্চ পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনার পর হওয়া মামলার তিন আসামির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের করা মামলার প্রধান আসামি লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি গোলাম রব্বানীর মরদেহ ২০১৪ সালের ১৮ জানুয়ারি সকালে জেলা সদরের পলাশবাড়ি ইউনিয়নের নীলফামারী-ডোমার সড়কের গোচামারী ব্রিজের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। আর ওই বছরের ২০ জানুয়ারি সৈয়দপুর বাইপাস সড়কের ধার থেকে টুপামারী ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর শিবিরকর্মী মহিদুল ইসলামের (২৬) মরদেহ উদ্ধার করা হয় বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা থেকে। ২০১৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি এক অজ্ঞাত পরিচয় আসামির মরদেহ উদ্ধার করে দাফন করা হয়। পরে সেই মরদেহের ছবি দেখে একই বছরের ৪ মার্চ মহিদুলকে শনাক্ত করেন তার পরিবারের সদস্যরা। মহিদুল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা বিভাগের (ফারসি) মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে ১২ ডিসেম্বর কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার রাতে নীলফামারী জেলা সদরের লক্ষ্মীচাপ ও পলাশবাড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে হামলা চালায় জামায়াত-বিএনপি। ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে বিকেলে শহরে ফেরার পথে টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ বাজারে জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলা শিকার হন।