ঢাকা শুক্রবার, মে ৯, ২০২৫

Popular bangla online news portal

Rupalibank

‘দুই ছেলে, এক মেয়ে তবুও আমি ছাড়া আমাকে দেখার মতো কেউ নেই’


নিউজ ডেস্ক
২:৫৫ - রবিবার, অক্টোবর ২২, ২০২৩
‘দুই ছেলে, এক মেয়ে তবুও আমি ছাড়া আমাকে দেখার মতো কেউ নেই’

গভীর রাতে হাতে একটি হ্যান্ড মাইক নিয়ে ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ কিছুক্ষণ পর পর বলে উঠছেন ‘সাবধান, হুঁশিয়ার’। আর এভাবে ভোর অবধি চলে তার পাহারা। এলাকাবাসীকে নিরাপত্তা দিতে মাইক আর বাঁশি হাতে রাত পার করে দেন মাদারীপুর সদর উপজেলা টুবিয়া বাজারে নৈশপ্রহরী করিম খান (৭০)। বছরের পর বছর রাতজাগা এই কাজের জন্য যে পারিশ্রমিক পান, তা খুবই সামান্য। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়েই স্বল্প বেতনে বাধ্য হয়েইে এই চাকরি করছেন তিনি।

মাদারীপুর সদর উপজেলা টুবিয়া বাজারে নৈশপ্রহরী করিম খান (৭০)। তিনি মাদারীপুর সদর ঘটমাঝি ইউনিয়নের দক্ষিণ চিরাইপারা গ্রামের ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। সংসারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি একাই। এক মেয়ে ও দুই ছেলে তার।  স্ত্রী রেবাতুন নেসা ও মেয়ে হালানী বেগম, ছেলে ইকবাল খান ও লিবু খান নিয়ে ছিল তার সংসার। তবে ১০ বছর আগে তার স্ত্রী মারা যান। মেয়ের বিয়ে হয়েছে। এদিকে ছেলেরা বিয়ে করে যে যার মতো আছেন। বার্ধক্য ও শারীরিক নানা সমস্যা নিয়েও নিজের ভরণপোষণ ও ওষুধের টাকা জোগাড় করতে ৩০ বছর ধরে এখানে কাজ করছেন। এখন তাকে দেখার মতো তিনি নিজে ছাড়া আর কেউ নেই।

করিম খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বয়সের কারণে ভারী কাজ করতে পারি না। হার্টের সমস্যা, গ্যাস্ট্রিক ও আলসার এ সব রোগে ওষুধ কিনতে হয়। এরপর যা থাকে তাই দিয়ে অনেক কষ্ট করে সংসার চালাই।

জানা যায়, করিম খানের জীবনের বড় অংশ জুড়ে আছে হতাশা। ৮ ঘণ্টা রাত জেগে সাড়ে ৬ হাজার টাকা বেতন মিলছে তার। যুবক বয়সে করিম বেপারী ঢাকায় একটি চালের আড়তে ২০ বছর কাজ করেছিলেন। বয়স একটু ভারি হয় তেমন কাজ করতে না পারায় চলে আসেন নিজ গ্রামে। এরপর অন্য কোনো কাজ খুঁজে পাননি তিনি। তারপরে বাজারের কমিটির কাছে কাজের কথা বললে পান নৈশপ্রহরীর কাজ। এরপর থেকেই শুরু হয়েছে জীবন সংগ্রাম। ৩০ বছরের অধিক সময় পার করেছে নৈশপ্রহরীর কাজ করে।

করিম খান বলেন, গ্যাস্ট্রিক, আলসার ও হার্টের সমস্যার কারণে প্রতিমাসে ডাক্তারকে বিভিন্ন চেকআপ ও ওষুধবাবদ দিতে হয় সাড়ে ছয় হাজার টাকা। আমি প্রতিমাসে বেতন পাই সাত হাজার টাকা। আর ওষুধেই ব্যয় হয় সাড়ে ছয় হাজার টাকা। বাকি ৫০০ টাকা দিয়েই চলে আমার পুরো মাস। এই বয়সে আর অন্য কোনো কাজ করতে না পারায় সারারাত ধরে পাহারা দেই। বেশিরভাগ সময় না খেয়েই দিন পার করতে হয়। ছেলেরা যে যার মতো আছে। আমি ছাড়া আমাকে দেখার মতো আর কেউ নেই। মাঝে মাঝে বাজারের লোক এবং আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে খাবার ও ওষুধ কিনি। আমি সরকারের কাছে সাহায্য সহযোগিতা চাই। 

বৃদ্ধ করিম খানের ছোট ছেলে নিবুল খান বলেন, আমি নিজেই কাজকর্ম করতে পারি না। আমার স্ত্রী বিদেশ থাকে তার টাকা দিয়ে আমি চলি। আমার নিজেরই চলতে কষ্ট হয়।তারপর মাঝে মাঝে বাবাকে কিছু খরচ দেই।

আপনার বাবাকে এই বৃদ্ধ বয়সে কাজ করান কেন এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা আমি জানি না। তাকে বারণ করলেও সে শোনে না।।

স্হানীয় বাসিন্দা আতিকুল রহমান বলেন, আমার জন্মের পর থেকেই তাকে বাজারে নৈশপ্রহীর কাজ করতে দেখতেছি। এখন তার অনেক বয়স হয়ে গেছে আগের মত সে কাজ করতে পারে না। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে গেছে। বাজার থেকে যে কয় টাকা বেতন পায় তা দিয়ে তার চলতে কষ্ট হয়ে যায়। 

টুবিয়া বাজারের এক দোকানদার সোহেল খান বলেন, আমাদের এই বাজারটা একেবারে ছোট বাজার। তারপরও আমরা যতোটুকু পারছি তাকে ততটুকু সাহায্য সহযোগিতা করি। এই বয়সে তার জন্য কাজ করা অনেক কষ্ট সাধ্য। তার ছেলে-মেয়েরা দেখলে তার আর কাজ করা লাগত না। 

বৃদ্ধ করিম খানের মেয়ে হালানী বেগম বলেন, আমি পরের বাড়ি থাকি। তারপরও যতটুকু পারি আমার বাবাকে সাহায্য সহযোগিতা করি। আমার স্বামীর দিন আনে দিন খাই তারপরও আমি চেষ্টা করি আমার বাবাকে দেওয়ার জন্য। এদিকে আমার বড় ভাই এবং বড় ভাইয়ের ছেলে বিদেশ গেছে কিন্তু তারা শুনছে ওরকম বলে কাজকর্ম পায় নাই। এখন আমার বাবার চলাফেরা এবং খাওয়া-দাওয়া ওষুধ কেনা বড় কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। 

ঘটমাঝি ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার ইউনুস খান বলেন, করিম খানের এই বয়সে কাজ করা বড় কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।আমরা তাকে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যতটুকু পারি সাহায্য সহযোগিতা করব।  

মাদারীপুর সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ফেরদাউসি আক্তার বলেন, সে আবেদন করলে সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী তাকে সহযোগিতা করা হবে।