সামরিক অভিযান শুরুর সাত মাসেরও বেশি সময় পর ইউক্রেনের চার অঞ্চলকে রাশিয়ায় যুক্ত করতে চলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ উপলক্ষে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্নও করেছে তার প্রশাসন।
শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ক্রেমলিন বলছে, সাম্প্রতিক গণভোটে লুহানস্ক, দোনেতস্ক, জাপোরিঝিয়া এবং খেরসন অঞ্চল রাশিয়ায় যোগ দেওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে। তবে ইউক্রেন এবং পশ্চিমারা এই ভোটকে জাল বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
অবশ্য নতুন করে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড দখলে নেওয়ার ফলে রাশিয়ার ওপর এখন নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে খুব স্পষ্টভাবে বলতে চাই, ইউক্রেনের সার্বভৌম ভূখণ্ডে রাশিয়ার দখলদারিত্বকে কখনোই স্বীকৃতি দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।’
এদিকে বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া এবং খেরসনকে ‘স্বাধীন’ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে দু’টি ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এতে এই দুই অঞ্চলকে রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে সংযুক্ত করার পথ প্রশস্ত হয়ে গেছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে সামনে আনা নথিতে বলা হয়েছে, দুই অঞ্চলের স্বাধীনতা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী স্বীকৃত এবং ‘জাতিসংঘের সনদে অন্তর্ভুক্ত’ হয়েছে। তবে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, শক্তি প্রয়োগের ভিত্তিতে কোনো দেশের ভূখণ্ড দখল করা জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
এতে ‘বিপজ্জনক ভাবে উত্তেজনা বৃদ্ধি’ পায় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আধুনিক বিশ্বে এর কোনো স্থান নেই’।
অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে ফোনালাপে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানও ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড দখলের এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন। একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, উত্তেজনা কমাতে এবং ইউক্রেনের সাথে শান্তি আলোচনার আরেকটি সুযোগ দেওয়ার জন্য রাশিয়ান নেতাকে আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট।
আট বছর আগে একইভাবে ক্রিমিয়া দখল করেছিল রাশিয়া। এবারও সেটির পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে যদিও ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সেই দখলদারিত্বকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিশাল অংশ কখনোই স্বীকৃতি দেয়নি এবং এবারও দেবে বলে মনে হয় না।
তবে পশ্চিমারা যাই বলুক না কেন, রাশিয়ার পার্লামেন্টের দু’টি কক্ষ আগামী সপ্তাহে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড দখলের এই পদক্ষেপকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করবে।
প্রেসিডেন্ট পুতিন হয়তো আশা করছেন, ইউক্রেনের দখলকৃত এলাকাগুলোকে রাশিয়ার সাথে সংযুক্ত করে ফেললে তিনি যুক্তি দিতে সক্ষম হবেন যে, রাশিয়ান অঞ্চল পশ্চিমা অস্ত্রের আক্রমণের শিকার হচ্ছে। মূলত ইউক্রেনের মিত্র কিছু দেশ কিয়েভকে তাদের সামরিক সহায়তা বন্ধ করতে পারে এটিও আশা করছেন পুতিন।
তবে কিয়েভ বলেছে, যুদ্ধক্ষেত্রে এর (ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড দখলের) ফলে কোনো পরিবর্তন হবে না।