ঢাকা শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪

Popular bangla online news portal

Janata Bank
Rupalibank

বাড়ছে বেকারত্ব , কমছে কর্মসংস্থান


নিউজ ডেস্ক
১৬:০৭ - বৃহস্পতিবার, জানুয়ারী ১১, ২০২৪
বাড়ছে বেকারত্ব , কমছে কর্মসংস্থান

বন্যা বাড়ৈ:: সাধারণ অর্থে বেকারত্ব বলতে কোনো সমাজে কর্মক্ষম লোকের জন্য কাজের অভাব বা কর্মসংস্থানের অভাবকে বোঝানো হয়। কর্মক্ষম জনগণের ইচ্ছা ও সামর্থ্য অনুসারে তাদের যোগ্যতার ভিত্তিতে যদি সমাজে পর্যাপ্ত পরিমাণে কাজ না থাকে, যার প্রভাবে জনগণ ভবঘুরেভাবে বা অলসভাবে অন্যের বোঝা হয়ে সমাজে বসবাস করে, তাদের বেকার বলা হয়।

বেকারত্ব সমাজের জন্য যেমন বোঝা তেমনি বেকার মানুষের কাছে অভিশাপস্বরূপ। বেকার মানুষ অবসাদগ্রস্ত নানা অপকর্মে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে। বেকারত্বের কারণে পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলার যেমন অবনতি ঘটে তেমনি সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়।

বেকারত্বের কারণ:

১ । দুর্বল অর্থনৈতিক কাঠামো: দুর্বল ও অসচ্ছল অর্থনৈতিক কাঠামো বাংলাদেশের বেকারত্বের জন্য দায়ী। বাংলাদেশ সরকারও জনগণের বেকারত্বের জন্য দায়ী। বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের ব্যক্তিগত পর্যায়ে অর্থনৈতিক কাঠামো এতই দুর্বল যে, কারো পক্ষেই বৃহৎ উৎপাদন শিল্পে মূলধন বিনিয়োগ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এ কারণে ক্রমবর্ধমান বেকারদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হয় না। তাই দুর্বল অর্থনৈতিক কাঠামো স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে বেকারদের সংখ্যা হ্রাস করতে পারে না ।

২।  জনসংখ্যা বৃদ্ধি : বাংলাদেশে যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সে হারে কর্মসংস্থান না হওয়ায় ক্রমান্বয়ে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখনও শতকরা ১.৪৮ হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, অথচ সে অনুযায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ক্রমান্বয়ে কৃষিজ জমিতে বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে ফলে কৃষক তার ফসলী জমি হারাচ্ছে।

৩। সমন্বয়হীন শিক্ষাব্যবস্থা:  বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি মূল কারণ হলো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সমাজব্যবস্থার সমন্বয়হীনতা। অর্থাৎ, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সবক্ষেত্রে কর্মমুখী নয়। তাই প্রতিবছর শত শত বেকার যুবক বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করে বের হচ্ছে। 


বেকারত্ব সমস্যা সমাধান:

বেকারত্ব সমস্যা আমাদের একটি জাতীয় সমস্যা। বেকারত্ব সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের জাতীয়ভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। এর জন্য প্রথম প্রয়োজনে সমাজ কাঠামোর সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থার সমন্বয়। জাতীয় শিক্ষানীতি ঘোষণা করে, যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা ও কর্মমুখী শিক্ষার প্রচলন করতে হবে। দেশে শিল্প-কলকারখানা স্থাপন করে বিদেশি বিনিয়োগে বৃদ্ধি করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। 

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। প্রযুক্তি শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র প্রস্তুত করে সেখানে যুবশক্তিকে নিয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ উৎপাদনমুখী শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের দেশের বেকারত্ব ঘোচোতে সূচনা রাখতে পারে। 

অন্যদিকে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার পথ উন্মুক্ত করা দরকার। বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্পকারখানা গড়ে তুলে দক্ষ, অদক্ষ তরুণ-তরুণীদের সেখানে কাজে লাগাতে হবে। দেশের শিক্ষিত যুব সমাজকে গ্রামমুখী করে গড়ে তোলা আজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। চাকরির মানসিকতা পরিহার করে আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজের প্রতি তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনীও প্রশিক্ষণ এবং শর্তহীন সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা ইতিমধ্যে সরকার চালু করেছে। 

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এ ধরনের কার্যক্রম চালু করেছে। যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ এবং ঋণের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচুর শিক্ষিত যুবক স্বনির্ভর ও স্বাবলম্বী হয়েছে। দেশের যুবশক্তিকে কৃষিকাজ, মৎস্য চাষ, পশু পালন, কৃষি খামার, দুগ্ধ খামার ইত্যাদি কাজে উৎসাহী করে তুলতে হবে। এর জন্য গণমাধ্যমে প্রচার, প্রদর্শনী, পোস্টার ও পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে আমাদের সমাজে বেকারত্ব সমস্যা দূর হবে। এভাবেই আমরা আমাদের দেশকে একটি সুন্দর বেকারত্বহীন রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারব।


জেড এইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়