ঢাকা শনিবার, মে ৪, ২০২৪

Popular bangla online news portal

Janata Bank
Rupalibank

প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণ ও প্রতিকার


নিউজ ডেস্ক
১১:৩৮ - বৃহস্পতিবার, জানুয়ারী ৪, ২০২৪
প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণ ও প্রতিকার

আফরোজা জাহান এমি

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ব-দ্বীপ। নদীমাতৃক এদেশের মানুষের জীবনের নিত্যসঙ্গী বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ ৷ বিশেষশত উপকূলবর্তী অঞ্চলে বসবাসরত মানুষগুলোকে বাঁচতে হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগকে সঙ্গী করে। কোন কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ আসার আগে তার পূর্বাভাস পাওয়া গেলেও সে দুর্যোগকে কিন্তু আটকানো যায় না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসে মুহুর্তের মধ্যে তাদের চিরচেনা জীবনকে লণ্ডভণ্ড করে দেয়। দুর্যোগ শেষে আবার তাদের বাঁচতে হয় নতুন আশায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা ছোট হোক কিংবা বড় এর ক্ষতিকর প্রভাব পরিবেশ ও মানবজীবনের উপর দীর্ঘদিন থেকে যায়।


মানবসৃষ্ট নয় এমন দুর্ঘটনা, যা মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে তাই-ই প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সহজ কথায়, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট দুর্যোগসমূহ হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বাংলাদেশে প্রায় প্রতিবছর কোনো না কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ এদেশের জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে দেয়। সৃষ্ট এই দূর্যোগসমূহ তিনটি ভিন্ন স্তরে সংঘটিত হয়ে থাকে :


বায়ুমণ্ডলে সংঘটিত দুর্যোগ (ঝড়, ঘূর্ণিঝড়, হারিকেন, টর্নেডাে,কালবৈশাখি, অতিবৃষ্টি ইত্যাদি), ভূপৃষ্ঠে সৃষ্ট দুর্যোগ (ভূমিধস, নদীভাঙন, বন্যা, ভূ-অভ্যন্তরস্থ পানিদূষণ প্রভৃতি।), ভূ-অভ্যন্তরে সৃষ্ট দুর্যোগ (ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত) যদিও বাংলাদেশে অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা নেই।


প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণ : পরিবেশ দূষণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর বহু দেশে সৃষ্টি হচ্ছে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তবে শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ জলবায়ু পরিবর্তন প্রাকৃতিক কারণে হয়তাে হতে পারে। তবে বেশিরভাগ পরিবর্তন হচ্ছে মনুষ্য সৃষ্ট। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী শিল্পোন্নত দেশগুলাে। এদের অতি ভােগবিলাসিতা ও যন্ত্রনির্ভরশীলতার জন্য পৃথিবীতে গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এসব দেশের কলকারখানা ও গাড়ি থেকে অতিমাত্রায় কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের ফলে বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে তাপমাত্রা তাতে মেরু অঞ্চল ও বিভিন্ন পর্বতে জমে থাকা বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। সমুদ্র ও নদীর কম্পন বাড়ছে ফলে নদী ও সমুদ্রের উপকূলে ভাঙনের হারও বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলাে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ।


জলবায়ু পরিবর্তন ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে দেশের বেশিরভাগ নদী শুকিয়ে যাচ্ছে । পলি জমে বেশকিছু নদী দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। দেশের প্রধান নদীগুলাে বিভিন্ন স্থানে এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার মাধ্যমে হিমালয় থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশের নদীগুলােতে পানি এলেও এগুলাের স্রোতধারা অনেকটা কমে গেছে । ব্রহ্মপুত্রের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। পদ্মার বুকেও বিভিন্ন স্থানে চর পড়ে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে বর্ষাকালে নদীর উপচে পড়া পানি প্লাবিত করে ফসলের মাঠ, জনবসতি। প্রতি বছরই বন্যা এদেশের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন উজাড় করাও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আরেকটি কারণ। প্রত্যেক দেশের মােট আয়তনের ২৫% বনাঞ্চল থাকা যেখানে প্রয়ােজন সেখানে বাংলাদেশে সরকারি হিসাবে মাত্র ১৭.৫০% ভাগ বনাঞ্চল রয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের অবস্থানকে অনেকে কারণ হিসেবে ধরে থাকে।


প্রাকৃতিক দূর্যোগের প্রতিকার: প্রাকৃতিক দূর্যোগের প্রতিকার বলতে দুর্যোগ পূর্ব ও পরবর্তী পদক্ষেপ গুলোকে নির্দেশ করে৷ যার মাধ্যমে আগাম সতর্কতা, দুর্যোগকালীন ক্ষয়ক্ষতির প্রশমন, দূর্যোগের পর পুর্নবাসন ও পুর্নগঠন, দূর্যোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা এবং ভবিষ্যতে যাতে দুর্যোগ না ঘটে সে জন্য অবকাঠামোগত ও সামাজিক উন্নয়নের ব্যবস্থা করা।


এগুলা হলো :

১. দূর্যোগ ঘটার পূর্ব থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং সেজন্যে বিশেষ ধরনের কর্মীবাহিনী সৃষ্টি ও জনগনকে প্রশিক্ষিত করে তোলা।

২. জাতীয় ভিত্তিতে দুর্যোগ মোকাবেলা করার নীতিমালা পরিকল্পনা ও কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন।

৩. জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রমের মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের ব্যবস্থা করা।  

৪. পরিক্ষীত পদ্ধতির ভিত্তিতে যথাসময়ে সতর্কতা সৃষ্টির আয়োজন করা।  

৫. দ্রত ক্ষয়ক্ষতি ও চাহিদা নিরুপনের ব্যবস্থা করা।  

৬. তথ্য সরবরাহের ব্যবস্থা উন্নত করা।  

৭. সামরিক বাহিনীকে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কাজে সমন্বয় সাধন করা।

৮. থানা, জেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটি নিয়ে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহন করা।

৯. দুর্যোগ মোকাবেলায় নিয়োজিত কর্মীবাহিনীর বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।  

১০. সর্বোপরি দূর্যোগের সম্ভাব্যতা ও সেগুলোর মোকাবেলা করার পদ্ধতি সম্বন্ধে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করা।


জেড.এইচ.সিকদার ইউনিভার্সিটিঅফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজি