ঢাকা বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪

Popular bangla online news portal

Janata Bank
Rupalibank

যশোরে মাছের আঁশ রপ্তানি করে আয় ৩০ লক্ষাধিক ডলার


নিউজ ডেস্ক
৬:০১ - শনিবার, ফেব্রুয়ারী ১০, ২০২৪
যশোরে মাছের আঁশ রপ্তানি করে আয় ৩০ লক্ষাধিক ডলার

বছর দুই আগেও মাছ কাটার পর ফেলে দেওয়া হতো আঁশ। তবে সেই আঁশ এখন বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে দেশের জন্য বয়ে আনছে বৈদেশিক মুদ্রা। এছাড়া মাছের আঁশ ছাড়ানো বা মাছ কাটাকে পেশা হিসেবে নিয়ে সাবলম্বী হচ্ছেন অনেকে। যশোর অঞ্চল থেকে মাছের ফেলনা এই অংশ বিদেশে রপ্তানি করে বিগত অর্থ বছরে ত্রিশ লক্ষাধিক ডলার আয় হয়েছে। 

জেলা মৎস্য অফিসসহ বিভিন্ন ব্যসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় অনেক ব্যবসায়ীই এখন মাছের আঁশ ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত। স্থানীয় বাজার থেকে আঁশ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে জাপান, চীন, ইন্দোনেশিয়া,ফিলিপিন্স, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়ায়। যশোর শহরের বড়বাজার, রেল বাজার, চুয়াডাঙ্গা বাজার ঘুরে দেখা গেছে ব্যবসায়ীরা মাছের আঁশ ফেলে না দিয়ে জমিয়ে রাখছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই মাছের আঁশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে লিপস্টিক, প্রসাধনী সামগ্রী, ক্যাপসুলের আবরণ বা ক্যাপসহ বিভিন্ন পণ্য।

এদিকে যারা বিভিন্ন বাজারে মাছ কাটেন তারাও এই মাছের আঁশ জমিয়ে রাখেন। পরবর্তী সময়ে তা বিক্রি করেন ব্যাপারীদের কাছে। এরপর সেই আঁশগুলোকে ব্যাপারীরা ধুয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে ঝরঝরে করেন। এভাবে বিক্রি করা হয় পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে। 

মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২২-২৩ অর্থ বছরে যশোর অঞ্চল থেকে আঁশ রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ২৬৩ মেট্রিকটন। যা থেকে আয় হয়েছে ৩০ লাখ ৩১ হাজার ১৫০ ডলার।

মাছ কাটা পেশায় জড়িত অনেকে জানিয়েছেন এ পেশায় তাদের সাবলম্বী হওয়ার গল্প। শহরতলীর ঘোপ বাবলাতলা মাছ বাজারে মাছ কাটেন আব্দুল হায়দার। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিদিন প্রায় ২০-২৫ কেজি আঁশ হয়। এগুলো বিক্রি করে মাসে ৭-৮ হাজার টাকা বাড়তি আয় হয়। এর আগে মাছের আঁশ গুলোকে ফেলে দিতাম।

বড় বাজারে আল আমিন নামে আরেক মাছ কাটা ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিদিন মণ খানেক মাছ কাটি। মাছ কেটে যেটা আয় হয় তার পাশাপাশি বাড়তি আয় হয় আঁশ বিক্রি করে। এগুলো বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে বলে আমরাও দাম ভালো পাচ্ছি।

চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড বাজারে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে মাছ কাটেন ইলিয়াস হোসেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে আমরা মাছের আঁশ ফেলে দিতাম। পরে যখন জানতে পারলাম এগুলো বিদেশে বিক্রি হচ্ছে তখন থেকে আশঁ জমিয়ে বিক্রি শুরু করি। অনেক বেকাররা এখন আমাদের এ পেশায় আসছে।

মাছের আঁশের পাইকারী ব্যবসায়ী রুহুল শেখ বলেন, আমরা বিভিন্ন বাজার থেকে মাছের আঁশগুলো সংগ্রহ করি। এরপর বাসাবাড়িতে এনে ধুয়ে পরিষ্কার করে ছাদে রোদে শুকিয়ে নেই। এরপর বস্তাবন্দি করে ঢাকা, চট্রগ্রাম পাঠিয়ে দেই সেখান প্রক্রিয়াকরণ শেষে বিদেশে রপ্তানি হয়। 

যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সরকার মুহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, মাছের আঁশ বিদেশে রপ্তানি শুরু হওয়ার পর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের নতুন একটি পথ সৃষ্টি হয়েছে। তৈরি হয়েছে নতুন আরও একটি পেশা। 

তিনি আরও বলেন, একটা সময় এটি আবর্জনা ছিল এখন এটি সম্পদে পরিণত হয়েছে। এই মাছের আঁশ থেকে ২০ শতাংশ জেলেটিন উৎপাদন হয় যা দিয়ে বিভিন্ন ঔষধ শিল্পে এবং বিভিন্ন প্রসাধনী তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। তবে বর্তমানে বাংলাদেশে এর কারখানা নেই এজন্য বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। এটি নিয়ে অনেক ভালো একটা সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা বিভিন্ন বাজারে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করছি।