দৈনিক প্রথম আলোর নামে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মামলার আবেদন করা হয়েছে। আবেদনে গত ৩০ মার্চ পত্রিকাটিতে প্রকাশিত এক ঈদ শুভেচ্ছা বার্তার বর্ণনা দিয়ে সেখানে ধর্ম অবমাননার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। যে কারণে পত্রিকার সম্পাদক, প্রকাশকের পাশাপাশি কনটেন্টটির দায়িত্বে থাকা একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের নামে মামলার আবেদন করা হয়েছে।
সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজজামানের আদালতে নজরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি এ মামলার আবেদন করেন। এতে ওই পত্রিকার সম্পাদক, প্রকাশক ও গ্রাফিক্স ডিজাইনারকে আসামি করা হয়েছে। আদালত বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী রবিবার (৪ মে) দিন ধার্য করেছেন আদালত। মামলার আবেদনটি করেন নজরুল ইসলাম (৪৮)। তিনি নরসিংদীর পলাশ উপজেলার বালিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
মামলার বিবরণী সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ মার্চ প্রথম আলো তাদের ঈদ শুভেচ্ছায় ইসলাম ধর্মের পবিত্র উৎসবকে চিত্রায়িত ব্যঙ্গাত্মক কার্টুনের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর ঈদের মতো পবিত্র ইবাদতকে হেয় প্রতিপন্ন ও অবমাননা করেছে; যা দণ্ডবিধির ১৮৬০ এর ২৯৫, ২৯৫(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ধর্মীয় অনুভূতিকে চরমভাবে অবমাননা করা হয়েছে উল্লেখ করে বিবরণীতে আরও বলা হয়, একটি সচেতন এবং সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ঈদুল ফিতরের মতো মহান ধর্মীয় উৎসবকে অপমানিত ও হেয় করার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। এই ছবি শুধু আমার ব্যক্তিগত অনুভূতিতে আঘাত করেনি; বরং সমগ্র মুসলিম সমাজের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরমভাবে আঘাত করেছে।
বাদি ও সাক্ষীরা ওইদিনই পত্রিকাটি পড়ে এ বিষয় সম্পর্কে অবগত হন এবং আসামিরা স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে, ইচ্ছাকৃতভাবে অপরাধটি করেছে বলে বিবরণীতে উঠে এসেছে।
মামলার বিষয়ে বাদী নজরুল ইসলাম বলেছেন, মামলাটা করেছি প্রথম আলোর বিরুদ্ধে। প্রথম আলো ঈদ সংখ্যার প্রচ্ছদের ভেতরে তারা কুকুরের ছবি দিয়েছে। এর আগে প্রথম আলো ধারাবাহিকভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে, আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে চক্রান্তের মধ্যে লিপ্ত ছিল। আমরা আশা করেছিলাম, ৫ আগস্টের পর তারা চক্রান্ত থেকে সরে আসবে। কিন্তু প্রথম আলো আর ডেইলি স্টার, যাদের আমরা দিল্লি স্টার বলে চিনি, তারা তাদের চিরাচরিত ইসলাম বিদ্বেষ থেকে ফিরে আসেনি। তারা দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমি কোর্টের মাধ্যমে বিচার চাই, আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চাচ্ছে। এই ধর্মীয় অবমাননার দায়ে তাদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। যাতে অদূর ভবিষ্যতে আর কেউ ইসলামকে নিয়ে, ধর্মকে নিয়ে, দেশের মানুষকে নিয়ে, দেশকে নিয়ে আর কেউ এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে না পারে। উপযুক্ত শাস্তির জন্য আমি সাধারণ একজন মুসলমান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে এসেছে। আমি কারও প্ররোচনায় এখানে আসিনি। একজন মুমিন হিসেবে নিজের দায়বদ্ধতা থেকে এখানে এসেছি।
এর আগে, গত ৩০ মার্চ (পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগের দিন) প্রথম পাতায় প্রথম আলো ঈদ শুভেচ্ছা কার্টুনে ঈদ মোবারক লেখার পাশে কুকুরের ছবি দেয়। যা মুহূর্তে দেশব্যাপী ভাইরাল হয়ে যায়। পরবর্তীতে ঈদ শুভেচ্ছায় কুকুরের ছবি দেওয়ায় দেশের আলেম সমাজসহ সাধারণ মানুষ তীব্র নিন্দা জানান।
তাদের দাবি, এটা একটা ধর্ম অবমাননার শামিল। জড়িতদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে। এমনকি প্রথম আলো নিষিদ্ধ করতে হবে।