ঢাকা বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪

Popular bangla online news portal

Janata Bank
Rupalibank

গোটা আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা থাকছে আবার থাকছে না


নিউজ ডেস্ক
১৬:০৩ - সোমবার, জুন ৫, ২০২৩
গোটা আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা থাকছে আবার থাকছে না

গাইবান্ধা উপ-নির্বাচনের মতো গোটা আসনে ভোট বন্ধের ক্ষমতা নিয়ে আরপিওতে দুটি ধারা থাকছে। এর একটি ধারা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন সমগ্র আসনের ভোট বাতিল করতে পারবে। আরেকটি ধারা অনুযায়ী কেবল সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা যাবে, সব কেন্দ্রের নয়।

সোমবার (৫ জুন) নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে ভোট বন্ধ করার বিষয়ে নতুন একটি বিধান যুক্ত করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী বিল সংসদে উপস্থাপন করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। 

বিলে বলা হয়, জাতীয় সংসদের কোনো আসনের নির্বাচনে সব কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ ছাড়া পুরো আসনের ভোটের ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে না নির্বাচন কমিশন। যেসব ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হবে, শুধু সেসব কেন্দ্রের ভোটের ফলাফল বাতিল করার ক্ষমতা পাবে ইসি। এতে ভোট বন্ধে ইসির ক্ষমতা সীমিত হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে।

তবে আইনমন্ত্রী বলছেন, এর মাধ্যমে ইসির ক্ষমতা খর্ব হচ্ছে না। আরপিওর ৯১ (এ) ধারা অনুযায়ী উপযুক্ত কারণ দেখা দিলে এখনো নির্বাচন কমিশন গোটা আসনের ভোট বা ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে। নতুন করে যুক্ত করা ৯১ (এ) (এ) অনুযায়ী তারা গোলযোগ হওয়া কেন্দ্রগুলোর ভোট আলাদাভাবে বন্ধ করে দিতে পারবে। বাকি যেসব কেন্দ্রে ভোট সুষ্ঠু হয়েছে সেগুলো বাতিল করা যাবে না।

অর্থাৎ মন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী দুই ধরনের পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন দুই ধরনের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। সুতরাং তাদের ক্ষমতা কমেনি, বরং বেড়েছে।

বিলটি সংসদে উপস্থাপনে আপত্তি জানান জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। তার আপত্তি অবশ্য কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। এরপর আইনমন্ত্রী বিলটি সংসদে তোলেন। পরে বিলটি পরীক্ষা করে ১৫ দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

সংশোধনী বিলটির প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, নতুন ধারা অনুযায়ী অনিয়মের কারণে সুনির্দিষ্ট কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা থাকলেও গোটা নির্বাচনী এলাকার সব ভোট কেন্দ্র বন্ধ করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে।

‘ইসি যদি মনে করে সকাল থেকে এখানে আরও অনেক গন্ডগোল হবে, পরিবেশ খারাপ, যেটা গাইবান্ধায় হয়েছিল। দুতিনটির পরে তারা বন্ধ করতে দিতে পারবে, সে স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে।’

ফখরুল ইমামের এ বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, জোর জবরদস্তি, গোলযোগ, সহিংসতার তদন্তসাপেক্ষে গোটা নির্বাচনী এলাকার ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা (আরপিও ৯১ (এ) অনুচ্ছেদ) নির্বাচন কমিশনের হাতে এখনো রয়েছে। নতুন সংশোধনী যেটা আনা হয়েছে তা হলো, যেসব কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে সেগুলো বন্ধ করতে পারবে। একই আসনের যেখানে সঠিক নির্বাচন হয়েছে তা বন্ধ করার ক্ষমতা কমিশনকে দেওয়া হয়নি। এটাতে ইসির ক্ষমতা খর্ব করা হয়নি বরং ইসিকে শক্তিশালী করা হয়েছে।

আইনমন্ত্রী বলেন, এবার যে সংশোধনী আনা হয়েছে ৯১ (এ) তে। এতে বলা হয়েছে, কোনো একটা পোলিং সেন্টারে যদি গন্ডগোল দেখা যায়, ধরুন আমার নির্বাচনী এলাকায় ১১৪টি কেন্দ্র রয়েছে। এখানে যদি দুটো কি তিনটায় গন্ডগোল হয়, সহিংসতা, জবরদস্তির ঘটনা ঘটে; তাহলে এ দু-তিনটা কেন্দ্রের নির্বাচন বন্ধ করতে পারে ইসি। কিন্তু এ দুতিনটার কারণে ১১১টা কেন্দ্রে যে সঠিক নির্বাচন হয়েছে সেটা বন্ধ করার ক্ষমতাটা এ আইনে দেওয়া হয়নি।

‘এটা গণতন্ত্রের পরিপন্থি নয়। ১১১টা কেন্দ্রে সঠিক নির্বাচন হয়েছে, যেখানে গণতান্ত্রিকভাবে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে, সেটা ইসি বন্ধ করতে পারবে না। যদি বন্ধ করতে পারত সেটা অগণতান্ত্রিক।’

আইনমন্ত্রী জানান, আজ যে সংশোধনী আনা হয়েছে তা হচ্ছে ৯১ (এ) (এ)। ৯১ (এ) হিসেবে একটা অনুচ্ছেদ রয়েছেই; তাতে বলা রয়েছে, ইসির ক্ষমতা রয়েছে, তারা চাইলে পুরো কনস্টিটিউয়েন্সির নির্বাচন বন্ধ করে দিতে পারে। ইসি যদি দেখে কোনো নির্বাচনী এলাকায় সমস্যা হয়, জবরদস্তি থাকে, গন্ডগোল হয়, ভোটদানে বাধা দেয় তাহলে পুরো নির্বাচনী এলাকা বন্ধ করে দিতে পারবে।

উল্লেখ্য, গেল অক্টোবরে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের সময় সিসি ক্যামেরায় এক তৃতীয়াংশ কেন্দ্রে অনিয়ম দেখে আরপিও ৯১ (এ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সব কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করে দেয় নির্বাচন কমিশন। এ কারণেই নতুন করে ৯১ (এ) অনুচ্ছেদে সংশোধনী আনা হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে। নতুন সংশোধনীতে আরপিও’র ৯১ ধারার এ উপধারায় ‘ইলেকশন’ শব্দের বদলে ‘পোলিং’ শব্দ প্রতিস্থাপন করারও প্রস্তাব করা হয়েছে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯১ (এ) ধারায় বলা আছে, ‘নির্বাচন কমিশন যদি সন্তুষ্ট হয় যে, নির্বাচনে বলপ্রয়োগ, ভীতি প্রদর্শন এবং চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিরাজমান অপকর্মের কারণে যুক্তিযুক্ত, ন্যায়সংগত এবং আইনানুগভাবে নির্বাচন পরিচালনা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে না। তাহলে যেকোনো ভোটকেন্দ্র বা ক্ষেত্র মতো সম্পূর্ণ নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ে ভোট গ্রহণসহ নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে।’

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী আইনে (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ- আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাব গত ২৮ মার্চ নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এছাড়া, টিআইএন এবং ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের কপি জমা, প্রার্থিতা বাছাইয়ে বৈধ হলেও তার বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ, দল নিবন্ধনে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বের প্রতিশ্রুত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সময় ২০২০ সাল থেকে বাড়িয়ে ২০৩০ সাল করা এবং ভোটের সংবাদ সংগ্রহে থাকা গণমাধ্যমকর্মীদের কাজে বাধা দিলে কিংবা যন্ত্রপাতি বিনষ্ট করলে শাস্তি-সাজার বিধানসহ কয়েকটি প্রস্তাব রয়েছে সংশোধনী বিলে।