ঢাকা মঙ্গলবার, মার্চ ১৯, ২০২৪

Popular bangla online news portal

Janata Bank
Rupalibank

স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: বাঙালি জাতির বিজয়ের পূর্ণতা


নিউজ ডেস্ক
১৯:০২ - সোমবার, জানুয়ারী ৯, ২০২৩
স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: বাঙালি জাতির বিজয়ের পূর্ণতা

ইস্কান্দার মির্জা শামীম

১০ জানুয়ারি বাঙালি জাতির জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ দিন। কেননা সেদিনই বাংলাদেশ আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতি, বীর যোদ্ধাদের প্রেরণার উৎস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ফিরে পেয়েছিলেন। ওইদিন তিনি স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রনায়ক হয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সাথে সাথে বঙ্গবন্ধু আবেগে শিশুর মতো কেঁদে ফেলেছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে যে স্থানে ১০ লাখেরও বেশি মানুষের সামনে ঘোষণা করেছিলেন, "এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম"- দেশে ফিরে এসেই সে জায়গায় ফিরে এসেছিলেন। 

নয় মাস নির্জন কারাবাসের যন্ত্রণা, অনিশ্চয়তা, যে কোনও সময়ে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলার পরিস্থিতি অতিক্রম করে বিশ্ব জনমতের চাপে ৮ জানুয়ারি মুক্তিলাভ করেন। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে নিজের পিতা-মাতা, স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের কাছে না গিয়ে সরাসরি জনগণের কাছে ফিরে এসেছিলেন। লাখো মানুষের সামনে তিনি সেদিন বলেছিলেন, "…আমার বাংলাদেশ আজ স্বাধীন হয়েছে। আমার জীবনের স্বাদ আজ পূর্ণ হয়েছে। আমার বাংলার মানুষ আজ মুক্ত হয়েছে।…" আর তখনই যেন পূর্ণতা পেল বাঙালির জাতির রক্তে অর্জিত বিজয়। 

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বিকেলে বঙ্গবন্ধু লন্ডন দিল্লি হয়ে প্রাণের শহর ঢাকা ফিরে আসেন বেলা ১টা ৪১ মিনিটে। ঢাকায় অবতরণের পূর্বে কমেট বিমানটি বঙ্গবন্ধুর অভিলাষের প্রতি শ্রদ্ধাবশত প্রায় ৪৫ মিনিট বিমানবন্দরের উপর চক্রাকারে ঘুরতে থাকে। উপর থেকে তার ‘সোনার বাংলা’কে অবলোকন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। অভ্যর্থনায় অনেক কূটনীতিক এলেও চীন ও ইরানের কনসাল জেনারেলদ্বয় অনুপস্থিত ছিলেন, তবে যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেল হার্বার্ট ডি. স্পিভাক এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে করমর্দন করার সময় সৌজন্য প্রকাশের জন্য সামান্য অবনত হন এবং বলেন ‘ঢাকায় স্বাগতম’। বঙ্গবন্ধু হেসে উত্তর দেন, ‘আপনাকে অনেক ধন্যবাদ’। বিমানবন্দর থেকে লাখো জনতার ভিড় ঠেলে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসতে।

সেদিন রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে শিশুর মতো কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন, তার দুই চোখ গড়িয়ে অশ্রু পড়ছিল বারবার। তিনি কান্নারত কণ্ঠে বলেন, ‘বিশ্বকবি তুমি বলেছিলে সাত কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি, বিশ্বকবি তোমার সেই আক্ষেপ মিথ্যা প্রমাণিত করে সাত কোটি বাঙালি যুদ্ধ করে রক্ত দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেছে।’ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকার মতো করে নির্মিত ১০০ ফুট দীর্ঘ মঞ্চ থেকে ৩৫ মিনিটের ভাষণে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আমি জানতাম না আবার আপনাদের মধ্যে ফিরে আসতে পারব। আমি ওদের বলেছিলাম, তোমরা আমাকে মারতে চাও, মেরে ফেল। শুধু আমার লাশটা বাংলাদেশে আমার বাঙালিদের কাছে ফিরিয়ে দিও। আমার ফাঁসির হুকুম হয়েছিল, জীবন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলাম। বলেছিলাম আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান, মানুষ একবারই মরে। মরার আগে বলে যাব, আমি বাঙালি, বাংলা আমার ভাষা, জয় বাংলা।’

বঙ্গবন্ধু আরো বলেন, গত ৭ মার্চ আমি এই রেসকোর্সে বলেছিলাম ‘দুর্গ গড়ে তোলো’। আজ আবার বলছি, আপনারা একতা বজায় রাখুন। আমি বলেছিলাম, ‘বাংলাদেশকে মুক্ত করে ছাড়ব ‘ইনশা-আল্লাহ’। বাংলাদেশ আজ মুক্ত স্বাধীন। আমি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়, নেতা হিসেবে নয়, আপনাদের ভাই হিসেবে বলছি, যদি দেশবাসী খাবার না পায়, যুবকরা চাকরি বা কাজ না পায় তাহলে স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাব-পূর্ণ হবে না। বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে। আর তার ভিত্তি বিশেষ কোনো ধর্মীয় ভিত্তি হবে না। রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।

লেখক: সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটি