সাদমান, ইরিন, সিয়াম ও জিহানরা প্রায় সমবয়সী। তাদের সঙ্গে আরও জনাদশেক শিশু। সবাই ঝুড়ি নিয়ে আম কুড়াতে প্রস্তুত। বাঁশিতে ফু। পরমুহূর্তেই শিশুদের আম কুড়ানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল। এভাবেই হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দে মাতোয়ারা ছিল শিশুরা। সঙ্গে যোগ দেন তাদের অভিভাবকরাও৷
ঈদের পরদিন শুক্রবার দিনভর এমন আয়োজন করে সামাজিক সংগঠন গাজীপুরের টোক পেশাজীবী ফোরাম (টিপিএফ)। ঈদের আনন্দ বাড়িয়ে নিতে সংগঠনের সদস্য ও তাদের পরিবার যোগ দেয় নৌ-বিহারে৷ ট্রলার যোগে সংগঠনের সদস্যরা কাপাসিয়ার টোক বাজার থেকে সকালে রওনা হয়ে দুপুরে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় নারকেল তলার চর এলাকায় পৌঁছায়৷
পড়ন্ত চৈত্রে ব্রক্ষ্মপুত্র নদের জল শুকিয়ে গেলেও দু'ধারের দৃশ্য ছিল মনলোভা। সারি সারি নৌকা, ছোট ছোট কোষা ডিঙি দিয়ে জেলেদের মাছ ধরা, কোথাও বড়শিতে মাছ শিকার, এপার থেকে ওপারে দুরন্তপনাদের সাঁতার কাটা, নদীর ধারে রাখালের গরু চরানো-
ট্রলারে হাওয়ার সঙ্গে প্রকৃতির এমন বৈচিত্র্যতা তৃষ্ণা মেটায় ভ্রমণপিপাসুদের।
চরে পৌঁছার পর শুরু হয় মূল আয়োজন। শিশুদের 'আম কুড়ানো' প্রতিযোগিতা, কিশোরদের 'অঙ্ক দৌড়', নারীদের 'যার আছে তার নেই', বালকদের 'বল নিক্ষেপ'সহ হরেক রকমের খেলা৷ বিশেষ করে শিশুদের খেলার দৃশ্য দেখেছে উৎসুক স্থানীয় মানুষ৷
খেলার বিরতিতে শিশুসন্তান সবাইকে নিয়ে নদীতে সাঁতার কাটা সবই ছিল এই আনন্দ আয়োজনে।
সবচেয়ে মজার বিষয় ছিল নিজেরা রান্না করে খাওয়া ও নিজেরাই পরিবেশন করা৷ সবশেষ হাসির খোরাক যুগিয়েছ 'র্যাফেল ড্র'। সেরা দশ ভাগ্যবানের হাতে উঠে হরেক রকমের পুরস্কার। বাকিদের জন্য ছিল স্বান্তনার পুরস্কার।
বিকেলে ছিল পরিচিত পর্ব ও আলোচনা সভা। আয়োজন সংগঠন টিপিএফের সাধারণ সম্পাদক আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তা নাজমুল হক সুমনের সঞ্চালনায় এই পর্বে সভাপতিত্ব করেন সভাপতি ব্যাংক কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দিন আসিফ। অনুষ্ঠানে বিবিসি ক্যাডার, শিক্ষক, চিকিৎসক, ব্যাংকার, পুলিশ, সাংবাদিকসহ নানা পেশার ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্যে সবাই এমন আয়োজনে এসে শৈশবের স্মৃতি রোমন্থন করেন। টেনে আনেন নানা মজার অতীত। ব্যস্ততার ফাঁকে এমন আয়োজন জিইয়ে রাখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন সবাই৷
ফিরতি পথে সাঁঝের বেলায় সবাই নদীর পাড়ে ক্যামেরাবন্দী হন। ট্রলারে ছবি তোলা, অনুভূতির প্রকাশ, কবিতা, কৌতুক ও গান পরিবেশের মধ্যে দিয়ে নৌবিহার শেষ হয় টোক বাজার ঘাটে এসে।