ঢাকা রবিবার, মে ১৯, ২০২৪

Popular bangla online news portal

Janata Bank
Rupalibank

আইডিয়ালে ডায়েরি-ক্যালেন্ডার কেনাকাটায় ৩৬ লাখ টাকার দুর্নীতি


মামুনুর রহমান হৃদয়
২০:৩৯ - রবিবার, ডিসেম্বর ৩, ২০২৩
আইডিয়ালে ডায়েরি-ক্যালেন্ডার কেনাকাটায় ৩৬ লাখ টাকার দুর্নীতি

রাজধানীর আলোচিত মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ডায়েরি-ক্যালেন্ডার ছাপানো নিয়ে ৩৬ লাখ টাকার দুর্নীতি হয়েছে। সরকারি এক তদন্তে ডায়েরি-ক্যালেন্ডার কেনাকাটায় অনিয়ম করে পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। সেই কেলেঙ্কারিতে নাম এসেছে সদ্য বহিষ্কৃত আলোচিত আতিকুর রহমানের নাম। ডায়েরি-ক্যালেন্ডার কেনাকাটায় ছয় ধরনের অনিয়ম পেয়েছে তদন্ত কমিটি। অধিকতর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছে।

জানা গেছে, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের ডায়েরি ও ক্যালেন্ডার তৈরির জন্য ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে দরপত্র আহ্বান করা হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দরপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর সর্বনিম্ন এবং শর্ত পূরণকারী প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হওয়ার কথা থাকলেও এ নিয়মের তোয়াক্কা না করে দরপত্র মূল্যায়নের সঙ্গে জড়িতরা তাদের পরিচিত এবং কমিশনের নিশ্চয়তা দেওয়া প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার জন্য নির্বাচিত করে।

বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর তৎকালীন অধ্যক্ষ, আতিক ও সিনিয়র কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে গভর্নিং বডির সভাপতির কাছে অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক। অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও দুই মন্ত্রণালয়ের দুজন সচিবের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হয়। কমিটি সম্প্রতি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সেই প্রতিবেদনের কপি ঢাকা পোস্টের কাছে এসেছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে ৩৬ লাখ টাকা দুর্নীতির করার পাঁয়তারা হয়েছে বলে প্রমাণ মিলেছে। একই সঙ্গে মূল্যায়ন কমিটি মূল্যায়নের পুরো প্রক্রিয়া নিজেদের মতো করেছে। কমিটির দুজন সদস্য মারা গেলেও নতুন কমিটি না করে তদন্ত চালিয়ে নেওয়া হয়েছে। সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে তিন নম্বর দরদাতাকে কাজ দেওয়া হয়েছে। ক্রয় সংক্রান্ত সব কাগজপত্রে প্রতিষ্ঠানটির উপ-সহকারী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান খানের স্বাক্ষর না থাকলেও অন্তরালে থেকে ক্রয় সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তার সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

স্কুলের সংশ্লিষ্টরা জানান, সম্প্রতি লিফট কেনাকাটায় দুর্নীতি, অবৈধ ভর্তি বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক তদন্তে আতিকের নিয়োগ অবৈধ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আতিকের সম্পৃক্ততা পাওয়া প্রসঙ্গে স্কুলের একজন সিনিয়র শিক্ষক ঢাকা পোস্ট বলেন, তার বহিষ্কারের পর তদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে লাভ কী? অবৈধ নিয়োগ, ভর্তি বাণিজ্য থেকে শুরু করে এমন কোনো খাত নেই যেখানে আতিকের হাত ছিল না। তাকে শুধু বহিষ্কার নয়, তার বিরুদ্ধে অর্থ তছরুপের মামলা করা উচিত।

তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছরের ডায়েরি ও বর্ষপঞ্জি ক্রয়ে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। দুই খাতে সর্বনিম্ন দরদাতাদের কাজ দেওয়া হয়নি। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য না হয়েও অধ্যক্ষের যোগসাজশে কলকাঠি নেড়েছেন প্রতিষ্ঠানটিতে অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া উপসহকারী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান খান। ক্রয় কমিটির তিন সদস্যের দুজন অনেক আগে মারা গেলেও নতুন কমিটি গঠন না করেই কাজ দেওয়া হয়েছে। অবৈধভাবে কাজ দেওয়ায় এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩৬ লাখ টাকা বাড়তি গুনতে হয়েছে। তিন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

গভর্নিং বডির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব বাবুল মিয়াকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য ছিলেন- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক দেবাশিস কুমার দাস এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব পারভেজুর রহমান। গত ১৩জুলাই তদন্ত কমিটির সদস্যরা সরেজমিন প্রতিষ্ঠানে তদন্ত করে একটি রিপোর্ট জমা দেয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছরের ডায়েরি ও বর্ষপঞ্জি ক্রয়ের জন্য গত বছরের ২০ আগস্ট পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সাতটি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ডায়েরি সরবরাহ করার জন্য ৩৬ লাখ ৮২ হাজার ৭১৪ টাকার সর্বোনিম্ন দরপত্র জমা দেয় ‘আবরণ প্রিন্টাসর্’। কিন্তু ৫১ লাখ ৪৯ হাজার ৭৪৬ টাকা দরপত্র জমা দেওয়া ‘ট্রাস্ট কালার প্রিন্ট ও অ্যাকসেসরিজ’-কে কাজ দেওয়া হয়। একইভাবে ক্যালেন্ডার সরবরাহ করার জন্য ২২ লাখ ছয় হাজার ৯০০টাকা সর্বনিম্ন দরপত্র জমা দেয় ‘জারা প্রিন্টার্স’। এ প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দিয়ে চতুর্থ সর্বনিম্ন দরদাতা ‘মাস্টার সিমেক্স পেপার লি.’-কে ৪৩ লাখ ২১ হাজার টাকায় কাজ দেওয়া হয়। অবাক করা বিষয় হলো, ‘মাস্টার সিমেক্স পেপার লি.’ ৪১ লাখ ২০ হাজার ৫১৪ টাকায় দরপত্র জমা দিলেও প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দেওয়া হয় ৫১ লাখ ৪৯ হাজার ৭৪৬ টাকায়। একইভাবে ‘ট্রাস্ট কালার প্রিন্ট ও অ্যাকসেসরিজ’ ২৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকায় দরপত্র জমা দিলেও কাজ দেওয়া হয় ৪৩ লাখ ২১ হাজার টাকায়। দুই প্রতিষ্ঠানের জমা দেওয়া দরপত্রের চেয়ে প্রায় ২৮ লাখ টাকার বেশি দরে কাজ দেওয়া হয়।