ঢাকা রবিবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৪

Popular bangla online news portal

Janata Bank
Rupalibank

জমি ফ্ল্যাট নিবন্ধনে উৎস কর ২৪ গুণ বৃদ্ধি: বিনিয়োগ হারানোর শঙ্কায় আবাসন খাত


super admin
১৮:২৮ - রবিবার, জুলাই ৯, ২০২৩
জমি ফ্ল্যাট নিবন্ধনে উৎস কর ২৪ গুণ বৃদ্ধি: বিনিয়োগ হারানোর শঙ্কায় আবাসন খাত

অনিক চৌধুরী একজন তরুন ব্যবসায়ী। গত কয়েক বছর ব্যবসা ভালো হওয়ায় এ বছরই ঢাকায় জমি কেনার চিন্তা করেছিলেন। তবে হটাৎ করেই জমি নিবন্ধনে উৎস কর ২৪ গুণ হওয়ায় সরে এসেছেন সেই চিন্তা থেকে। তিনি বলেন, আমার ব্যবসা খুব বেশি বড় না। গত দুই বছর ব্যবসা কিছুটা ভালো ছিল, তাই চিন্তা করেছিলাম ঢাকায় এক টুকরো জমি কিনে কিছু টাকা বিনিয়োগ করতে। তবে এখন রেজিস্ট্রেশনের কর এলাকা ভিত্তিক ২৪ গুণের বেশী হয়ে যাওয়ায় জমিতে বিনিয়োগ করা নিরাপদ হবে না বলে মনে হচ্ছে, তাই আপাতত জমি কেনার চিন্তা বাদ দিয়েছি।

শুধু অনিক চৌধুরীই নয়, ছোট বড় অনেক ব্যবসায়ী জমিতে বিনিয়োগ লাভজনক ও নিরাপদ ভাবেন। তবে নিবন্ধন কর ২৪ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন ঢাকা বা বড় শহরে জমিতে বিনিয়োগ করা নিরাপদ মনে করছেন না তারা। আর অতিরিক্ত কর আরোপ আবাসন খাতের জন্য হুমকি বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপার্স এসোসিয়েশনও (বিএলডিএ)। গত ৬ জুলাই সংগঠনের সভাপতি ও বসুন্ধরা গ্ৰুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছেও এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভূমি উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান গুলোর মালিকদের এই সংগঠন। সংগঠনটি মনে করে, জমি নিবন্ধনে অতিরিক্ত কর আরোপের কারণে দেশের আবাসন খাতে বিনিয়োগ কমবে। পাশাপাশি অনেকেই দেশের বাইরে বাড়ি-ঘর করতে আগ্রহী হবেন, ফলে শঙ্কা বাড়বে অর্থ পাচার বৃদ্ধিতে। 

জানা গেছে, আয়কর আইন ২০২৩-এর আওতায় উৎসে কর বিধিমালায় নতুন ওই কর নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২৬ জুন বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। ওই বিধিমালা অনুযায়ী, দেশের যে কোনো এলাকায় স্থাবর সম্পত্তি বা জমি ও ফ্ল্যাটের মালিকানা হস্তান্তর এলাকা ভিত্তিক ২৪ গুণ বা কোথাও এর চেয়েও বেশী কর গুনতে হবে। ক্রেতাকে জমি, ফ্ল্যাট বা যে কোনো স্থাপনা নিবন্ধনের জন্য শুধু উৎসে কর হিসেবে কাঠাপ্রতি ৩ লক্ষ টাকা থেকে ২০ লক্ষ টাকা দিতে হবে। যা ইতিপূর্বে ছিল ১৬৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকা। 

আয়কর বিধিমালার সম্পত্তি হন্তান্তর থেকে কর আদায় শীর্ষক ৬ নম্বর ধারা অনুসারে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় সম্পত্তি নিবন্ধন কর ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে। গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম এলাকায় সিটি করপোরেশনের বাইরের এলাকা ও জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভা এলাকায় উৎস কর ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি দেশের যে কোনো পৌরসভার আওতাধীন সম্পত্তি কর ২ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশ এবং বাকি এলাকাগলোয় ১ শতাংশ থেকে কর বাড়িয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। গত ১ জুন অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় এ বিষয়ে প্রস্তাবনা দেন। আর ঐ প্রস্তাব বিধিমালায় অন্তভর্‚ক্ত করা হয়েছে।

কর পুননির্ধারণের অনুরোধ বিএলডিএ’র : প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে বিএলডিএ বলেছে, গত ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের বাজেটে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকার অবস্থিত জমি, জমিসহ বাড়ী, যে কোন স্থাপনা বাড়ী, ফ্ল্যাট, এ্যাপার্টমেন্ট অথবা ফ্লোর স্পেস হস্তান্তরের ক্ষেত্রে শুধু উৎসে কর হার ছিল দলিল মূল্যের উপর ৪ শতাংশ। কিন্তু ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের বাজেটে ৪ শতাংশের পরিবর্তে দলিল মূল্যের উপর ৮ শতাংশ অথবা বিভিন্ন এলাকার উপর ভিত্তি করে কাঠা প্রতি বিশ লক্ষ, বার লক্ষ, দশ লক্ষ, আট লক্ষ, ছয় লক্ষ ও তিন লক্ষ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে এলাকাভেদে কর হার ২৪ গুণের বেশী বৃদ্ধি করা হয়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, এত বেশী কর নির্ধারণের কারণে জনগণ জমি, বাড়ী, ফ্ল্যাট ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করতে নিরুৎসাহীত হবে। এছাড়া দেশের বাহিরে বিনিয়োগের আগ্রহী হবে তারা। এসব কারণে বিদেশে অর্থ পাচারেরও সম্ভাবনা রয়েছে। এতে সরকারের রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি দেশের আবাসন খাতে চরম অস্থিরতা দেখা দেবে। উচ্চ কর হার অযৌক্তিক, অমানবিক, স্বেচ্ছাচারি এবং বাস্তবায়নের অযোগ্য উল্লেখ করে বাড়ী, ফ্ল্যাট ও জমি রেজিষ্ট্রেশন কর সহনীয় পর্যায়ে আনার লক্ষ্যে উৎস কর পুননির্ধারণের অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে। উক্ত কর বৃদ্ধির কারণে জমি বেচা-কেনা কম হবে, ফলে সরকারের রাজস্ব আদায় কমে যাবে।

এছাড়াও আবাসন ব্যবসার সাথে প্রায় ১০ হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত এবং ১ (এক) কোটি লোকের কর্মসংস্থান। উৎস করসহ অন্যান্য কর কমানো না হলে ১০ হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে এবং ১ কোটি লোক বেকার হয়ে যাবে। যার ফলে দেশে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিবে।