ঢাকা শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

Popular bangla online news portal

Janata Bank
Rupalibank

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পরিবারের ছয় সদস্যের লাশ উদ্ধার


super admin
১:৫৯ - রবিবার, মার্চ ২০, ২০২২
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পরিবারের ছয় সদস্যের লাশ উদ্ধার

 টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অ্যালেন শহরে বসবাসরত বাংলাদেশি একটি পরিবারের ছয় সদস্যের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মা, বাবা, বোন ও নানিকে হত্যার পর ওই পরিবারের দুই সন্তান আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।

দুই ভাই ‘সুইসাইড নোট’ রেখে গেছেন। এই নোট থেকে মনে করা হচ্ছে, তাঁরা হতাশায় ভুগছিলেন। পরিবারকে লজ্জা ও কষ্ট থকে মুক্তি দেওয়ার জন্য দুই ভাই সবাইকে হত্যা করে নিজেরা আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন বলে সুইসাইড নোটে উল্লেখ রয়েছে। পুলিশ এ নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে।

স্থানীয় সময় গত রোববার দিবাগত রাত একটার দিকে নগরীর পাইন ব্লাফ ড্রাইভ এলাকার বাড়িটির দরজায় কড়া নাড়ে পুলিশ। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে পুলিশ কোনো ফোন কল পায়নি বলে জানানো হয়েছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হয়, ওই পরিবারের এক বন্ধু তাঁদের ফোন করে পাচ্ছিলেন না। এরপর তাঁরা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ ওই ঘরে ছয়জনের লাশ দেখতে পায়। বন্দুকের গুলিতে ছয়জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। বাড়িটি থেকে বন্দুকও উদ্ধার করেছে পুলিশ।

মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন ১৯ বছর বয়সী যমজ ভাই-বোন ফারহান তৌহিদ ও ফারবিন তৌহিদ, বড় ভাই তানভীর তৌহিদ (২১), মা আইরিন ইসলাম (৫৬), বাবা তৌহিদুল ইসলাম (৫৪), তানভীর তৌহিদের নানি আলতাফুন্নেসা (৭৭)।

অ্যালেন পুলিশ জানিয়েছে, দুই ভাই চারজনকে হত্যার পর নিজেরা আত্মহত্যা করেছেন বলে মনে হচ্ছে। মানসিক বিষণ্নতা থেকে মুক্তি পেতে তাঁরা এই কাজ করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা পাওয়া গেছে।

পুলিশ বলছে, ঘটনার আগে ফারহান তৌহিদ ইনস্টাগ্রামে একটি দীর্ঘ ‘সুইসাইড নোট’ পোস্ট করেছেন। এতে তিনি লিখেছেন, ‘আমি নিজেকে ও আমার পরিবারকে হত্যা করেছি।’

ফারহান আরও লিখেছেন কীভাবে তিনি নবম শ্রেণি থেকে মানসিক হতাশার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তাঁর বড় ভাইও হতাশার সঙ্গে লড়াই করেছেন।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইনস্টাগ্রাম পোস্টে ফারহান লেখেন, তাঁর ভাই বলেছেন, ‘আমরা যদি এক বছরে সবকিছু ঠিক করতে না পারি, তবে আমরা নিজেদের ও পরিবারকে হত্যা করব।’

নিজেরা আত্মহত্যা করলে পরিবার লজ্জায় পড়বে। তাই লজ্জা ও কষ্ট থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য অন্যদের হত্যা করে নিজেদের আত্মহত্যার কথা সুইসাইড নোটে উল্লেখ রয়েছে বলে পুলিশের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে। সুইসাইড নোটে হত্যার পরিকল্পনার কথাও লেখা আছে।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গত শনিবার কোনো এক সময় মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু জানায়নি। মেডিকেল পরীক্ষার পর এ বিষয়ে জানা যাবে বলে নগরীর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

টেক্সাসে বসবাসরত অপর প্রবাসী মিজান রহমান বলেছেন, সব সময় হাসিখুশি থাকা পরিবারটিতে এমন ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনিও বিশ্বাস করতে পারছেন না। বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য ঘটনাটি মর্মান্তিক বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মর্মান্তিক ঘটনার শিকার বাংলাদেশি পরিবারটির কোনো নিকটাত্মীয় আশপাশে নেই। বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাস লাশ দাফনের ব্যবস্থা করছে।

হাশমত মোবীন জানান, প্রায় ২২ বছর আগে ডিভি ভিসায় তৌহিদুল ইসলাম আমেরিকায় আসেন। তৌহিদুল ইসলামের জন্ম ও বেড়ে ওঠা পুনান ঢাকায়। পরিবার নিয়ে প্রথম দুই বছর নিউইয়র্কে ছিলেন। ২০ বছর আগে তাঁরা টেক্সাসে স্থানান্তর হন। প্রথমে তথ্যপ্রযুক্তিতে কাজ করলেও সম্প্রতি সিটি ব্যাংকের ভালো পদে কাজ করছিলেন তৌহিদুল।

হাশমত মোবীন জানান, নিহত আইরিনের এক ভাই নিউইয়র্কে থাকেন। দুঃসংবাদ পেয়ে তিনি টেক্সাসের পথে রওনা দিয়েছেন। একইভাবে মায়ামিতে বসবাসরত তৌহিদুল ইসলামের ভাইও টেক্সাসের পথে রয়েছেন।

ডালাস ও আশপাশের নগরীতে বসবাসরত প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশির প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাস। হাশমত মোবীন জানান, কমিউনিটির নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি ওই পরিবারকে জানতেন। ঘনিষ্ঠ লোকজন তৌহিদুল ইসলামের পরিবারকে আদর্শ বাংলাদেশি পরিবার বলেই জানতেন।
অ্যালেন পুলিশ জানিয়েছে, ২২ বছর বয়সী তানভীর তৌহিদ আইনসম্মতভাবে সম্প্রতি আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় করেছিলেন।